২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার



রোগী কেন হাতিয়ার

মাহাবুল ইসলাম || ২১ জুলাই, ২০২৩, ১২:৩৭ পিএম
রোগী কেন হাতিয়ার


সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রসূতি ও নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সেখানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এরপরই প্রতিবাদে একাট্টা হয়ে দুই দিন সারাদেশে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধ রাখেন চিকিৎসকরা। এতে দেশের স্বাস্থ্যসেবায় স্থবিরতা নেমে আসে।  দেশের হাজার হাজার রোগীকে জিম্মি করে স্বাস্থ্য সেবার মতো জরুরি সেবাকে বন্ধ করে আন্দোলন কি ওই পেশার মানকে সমুন্নত করেছে?  

একটি গণতান্ত্রিক দেশে আইন সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সবার জন্য সমান। সেন্ট্রাল হাসপাতালে ওই প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু কখনোই কাম্য নয়। আবার এটিও কাম্য নয় কোনো নিরাপরাধ মানুষ শাস্তি পাবে। তবে ডাক্তার কিংবা দায়িত্বশীল অন্য কারও অবহেলা বা উদাসীনতায় যদি মৃত্যু হয়; সেক্ষেত্রে অবশ্যই ভুক্তভোগী আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। এটি প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। আর আইন অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দুই চিকিৎসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তারা অপরাধী কি না? সেটা আইন বিচার করবে। কিন্তু তাই বলে বিচারকে প্রভাবিত করতে সারাদেশের রোগীকে জিম্মি করে, রোগীদের জীবনকে সংকটাপন্ন করা কেন? এমন হীন মানসিকতা একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশার মানুষদের থেকে কখনোই আশা করা যায় না।  

ওজিএসবিসহ চিকিৎসকদের অন্য সংগঠনগুলোও একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনে সমর্থন জানানোকে চিকিৎসকদেরই আরেকটি সংস্থা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) হঠকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে দু’দিন ধরে হঠকারী সিদ্ধান্তে রোগীদের জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত করা এক ধরনের অপরাধও বটে। একটি সভ্য-স্বাধীন দেশে এমন অবস্থা চলতে দেখা যায় না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ গণমাধ্যমে বলেছেন, চিকিৎসা এমন একটি সেবা, যা আসলে কখনোই বন্ধ হওয়া উচিত নয়। যে কোনো দেশেই, যে-কোনো আন্দোলনে চিকিৎসকদের আলাদা করে রাখা হয়। চিকিৎসা বন্ধ করে কোনো কিছু করা এই পেশার নৈতিকতার সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। সুতরাং সমস্বরে বলতে চাই, পেশার নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কাজগুলো বন্ধ হোক। কোনো ব্যক্তির অপরাধের বোঝা পুরো একটি পেশাকে কুলসিত না করুক; সেদিকে ওই পেশার মানুষকেই সর্তক থাকতে হবে। একটি সম্মানজনক পেশার ঘাড়ে বন্দুক রেখে মানুষকে জিম্মি করা বন্ধ হোক। আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা বন্ধ হোক। প্রতিষ্ঠিত হোক সাধারণ মানুষের সু-চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার।  

লেখক: সংবাদকর্মী



আরো পড়ুন