২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি বাড়েনি, তবে...

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ১১ জুলাই, ২০২৩, ০৮:০৭ পিএম
রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি বাড়েনি, তবে...


সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি বাড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করেছে বলে মনে করেন খাত-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ইউরোপ-আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি কমে যাওয়া এবং সারবিশ্বে করোনার প্রভাব কমে আসায় দেশের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে। তবে, তারা এও বলছেন, ডলারের বিপরিতে টাকার মান কমে গেছে। এ কারণেও টাকার অঙ্কে রপ্তানি আয় বেড়েছে। প্রকৃত অর্থে রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি।

অর্থনীতিবিদদের মতে, করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের সামগ্রিকভাবে রপ্তানির পরিমাণ কমে গিয়েছিল। বর্তমানে যুদ্ধের কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। ফলে দেশের রপ্তানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। রপ্তানি বাড়ার এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে সংশ্লিষ্টদের নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানির নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে।

সম্প্রতি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় এসেছে। মূলত পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে সদ্য বিদায়ী বছরে। যা এর আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) তুলনায় ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্যমতে, গত অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। এ সময়ে পোশাক রপ্তানির আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর আগের  অর্থবছরে (২০২১-২২) পোশাক রপ্তানির আয় ছিল ৪ হাজার ২৬১ কোটি ৩১ লাখ ডলার। তবে সামগ্রিকভাবে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় কিছুটা কমেছে। এ সময়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এ. বি. মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘টাকার অবমূল্যায়নের কারণেই মূলত টাকার অঙ্কে রপ্তানি  রেকর্ড পরিমাণ  বেড়েছে। বাস্তবিক অর্থে রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। আগে যেখানে ৮২ টাকা বা ৮৫ টাকায় এক ডলার পাওয়া যেতো, সেখানে এখন ১০৮ টাকা বা ১১০ টাকায় এক ডলার পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবেই আগের অর্থবছরের মতো সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে যদি সামান্য রপ্তানিও বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে ডলারের বিপরিতে টাকার অঙ্কে রপ্তানির রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যাবে; এটাই স্বাভাবিক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তেমনটিই ঘটেছে।’

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘রপ্তানি আরও বাড়াতে হলে পণ্যের ধরন বাড়াতে হবে। নতুন নতুন পণ্য রপ্তানির দিকে নজর দিতে হবে। পাশপাশি নতুন নতুন রপ্তানির বাজার খুঁজতে হবে।’

আরএসএস গ্রিনটেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফর ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বিদায়ী অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি বেড়েছে কি-না, তা ডাটা না দেখে বলতে পারবো না। তবে যদি রপ্তানি বেড়েও থাকে টাকার অঙ্কে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। আমার জানা মতে, অনেক বিদেশি বায়ার রয়েছেন যারা সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে অনেক অর্ডার বাতিল করে দিয়েছেন। তবে রপ্তানি বাড়াতে শুধু ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল থাকলে চলবে না। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়ার অনেক দেশসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ বাড়াতে হবে।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পচিালক (বস্ত্র) মাহমুদুল হাসান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘গত অর্থবছরের তুলনায় বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি বেড়েছে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছর বাদ দিলে এর আগের অর্থবছরগুলোতে রপ্তানিতে কোনো না কোনো বাধা ছিল। যেমন সারাবিশ্বে করোনার প্রভাবে আমাদের পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানিতে ভাটা পড়েছিল। এরপর এলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। পাশাপাশি আমাদের রপ্তানির বাজার ইউরোপ-আমেরিকায় মূদ্রাস্ফীতি চরমভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণেও আশানুরূপ আমরা রপ্তানি করতে পাচ্ছিলাম না দীর্ঘদিন। তবে এরইমধ্যে করোনার প্রভাব অনেকটা কেটে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকাতেও মুদ্রাস্ফীতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এছাড়া, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধও এখন তেমন একটা প্রভাব ফেলছে না রপ্তানিতে। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি বেড়েছে। তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিন্তু রপ্তানি হয়নি। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা আরও বেশি ছিল।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণেই টাকার অঙ্কে রপ্তানির পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে। পাশাপাশি রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে সরকার বিভিন্ন কোম্পানিকে প্রণোদনা দিয়ে আসছে। রপ্তানি বাড়ার এটাও একটা কারণ। তবে রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে কোম্পানিগুলোকে দেওয়া সরকারের প্রণোদনা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আমার মনে হয়।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/




আরো পড়ুন