উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বর্ষণে টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। স্থানীয়রা বলছেন, পানি বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে যমুনা নদীর বাম তীরঘেঁষা কয়েকটি উপজেলায়। ফলে চলতি বছর ৩ শতাধিক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চোখের সামনে নিমিষেই ভেঙে যাচ্ছে বসত-ভিটা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা। ফলে নির্ঘুম রাত কাটছে ভাঙন কবলিত মানুষদের। সরিয়ে নিচ্ছে ঘরবাড়ি, আবার অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না। ফলে তারা বলছেন, এমন অবস্থায় সরকারের কাছ কোনো ত্রাণ চান না। নদীভাঙন ঠেকাতে বাঁধ তৈরির দাবি জানা। এদিকে, প্রতিরোধে বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙনও শুরু হয়েছে। টাঙ্গাইলের সদর, ভূঞাপুর, কালিহাতি ও নাগরপুর উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় নদী পাড় ভেঙে তীরবর্তী বাড়িঘর-জমি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে ভূঞাপুর উপজেলার কষ্টাপাড়া, চিতুলিয়াপাড়া, পাটিতাপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকা।
ঈদের দিন থেকে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এতে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে, তাদের সহায় সম্বল। ঈদের আনন্দ উপভোগ করার পরিবর্তে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। একই অবস্থা টাঙ্গাইল সদর উপজেলা কাকুয়া ইউনিয়নের চরপৌলী নামক এলাকার। বর্ষার শুরু থেকেই ভাঙনের কবলে পড়েছে এখানকার বাসিন্দারা। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, এই এলাকার শতাধিক বাড়িঘর ও কয়েকশত একর ফসলি জমি। গৃহহীন হয়েছে হাজারো মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, খানুরবাড়ী, কোনাবাড়ী, মাটিকাটা, সিরাজকান্দি, পাটিতাপাড়া, সারপলশিয়া, নলশিয়া, ন্যাংড়া বাজার, রায়ের বাশালিয়া, কুঠিবয়ড়া, অর্জুনা, জগৎপুরা, বাসুদেবকোল, রামাইল, মেঘারপটল এলাকাসহ অর্ধশত গ্রামে যমুনার তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসত-ভিটা, ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি।
নদীভাঙনের শিকার উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের জিলকদ বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্রভাঙন শুরু হয়েছে। এতে করে একদিনেই আমার বসতভিটা যমুনা নদী গিলে খেয়েছে। বাড়ির পাশে থাকা জমিও নদীগর্ভে চলে গেছে বহু আগেই। এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার থাকার জায়গাটুকুও আর নেই। ৫ ও ১০ কেজি চাল দিয়ে কী করবো। এসব দরকার নেই। আমরা ভাঙন কবলিতরা ত্রাণ চাই না, ভাঙনরোধে বাঁধ চাই।’
একই গ্রামের জামাল উদ্দিন নামে আরও একজন বলেন, ‘আমরা নদীভাঙন এলাকার মানুষ। চোখের সামনে বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীর পেটে চলে যাচ্ছে। যারাই আসে তারা শুধু দেখে চলে যায়। আর বলে আগামী বছরই বাঁধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু ফের বন্যা আসে, শুরু হয় ভাঙন। প্রভাবশালীরা নিজ নিজ বাড়ির আঙিনায় জিও ব্যাগ ফেলে। আমাদের বসত-ভিটা রক্ষায় কেউ কথা রাখে না। অন্যের জায়গায় থাকতে হচ্ছে।’
গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার বলেন, ‘যমুনায় পানি বাড়ানোর বাড়ানোর কারণে গত কয়েক সপ্তাহ চিতুলিয়াপাড়ায়, খানুরবাড়ি, ভালকুটিয়া ও গোবিন্দাসীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। দিশেহারা হয়ে পড়েছে গোবিন্দাসীর ইউনিয়ন নদীপাড়ের মানুষ। গত শনিবার আমাদের এলাকার সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তার নির্দেশনায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেলাল হোসেন বলেন, ‘যমুনা নদীতে পানি বাড়ার কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উপজেলার গোবিন্দাসী, চিতুলিয়াপাড়া, কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ী ও পাটিতাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। ভাঙনের বিষয়টি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জিওব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।’
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘যমুনা নদীর বামতীর বরাবর ভাঙন রোধে বেশ কিছু পদক্ষে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১৮ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই