‘দুই-একদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম না কমলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা হবে’ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির এমন বক্তব্যের পর দিনাজপুরের হিলিতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে কমতে শুরু করেছে দেশি পেঁয়াজের দাম। একই কারণে ফরিদপুরেও পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। শনিবার (২০ মে) প্রতিকেজি পেঁয়াজ পাইকারি ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আজ একদিনের ব্যবধানে তা কমে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শনিবার হিলিতে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আজ (রোববার) ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে।
হিলি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু বুঝলাম না, গতকালকে পেঁয়াজ কিনতে এসে দেখি ৮০ টাকা। বাধ্য হয়ে এক কেজির জায়গায় ৫০০ গ্রাম কিনেছিলাম। আর পেঁয়াজ কিনতে আসিনি। অন্য বাজার করতে এসে দেখছি ৭০ টাকা কেজি।’
বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. আবুল কাসেম বলেন, ‘আমরাতো পাইকারদের কাছ থেকে কিনে খুচরা বিক্রি করি। আমরা যে দামে কিনি তার থেকে চার-পাঁচ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করি। গতকাল প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করি ৮০ টাকা আর আজ বিক্রি করছি ৭০ টাকা কেজি দরে।’
পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. ফেরদৌস রহমান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমরাতো পেঁয়াজ আবাদ করি না। কৃষকদের কাছ থেকে কিনে খুচরা দোকানিদের কাছে বিক্রি করি। গত শুক্র ও শনিবার (১৯ ও ২০ ) কৃষকদের কাছ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে কিনে খুচরা দোকানিদের কাছে ৭৭ থেকে ৭৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। আর খুচরা বিক্রেতারা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। আজ (২১ মে) ৬৫ টাকা কেজি দরে কিনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ৬৭ থেকে ৬৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। আর তারা বিক্রি করছে ৭০ টাকা কেজি দরে।’
মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হবে এমন খবর শুনে হয়তো আগেভাগেই ৫ থেকে ৭ টাকা কম দামে বাজারে পেঁয়াজ ছেড়ে দিচ্ছে মজুতদাররা।’
এদিকে, একই কারণে ফরিদপুরে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। বিভিন্ন হাটে-বাজারে তিন-চার দিন আগেও যে পেঁয়াজ মণপ্রতি ৩০০০ থেকে ৩৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, তা এখন মণপ্রতি ২১০০ থেকে ২৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের সালথার পেঁয়াজ চাষি রুস্তম আলী বলেন, ‘গত দু’তিন দিনে ভালো দাম পেয়ে কয়েক হাট মিলে দেড়শো মণ বিক্রি করে দিয়েছি। আজকের হাটে ৩০ মণ বিক্রির জন্য এনেছি। কিন্ত মণপ্রতি প্রায় হাজার টাকা কমে গেছে। তবে এখনও যে দাম আছে, তা মোটামুটি। আরও দাম কমলে লোকসান হবে কৃষকদের।’ পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার দাবি জানান তিনি।
বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম সাতৈর বাজারে এসেছেন পেঁয়াজ বিক্রি করতে। তিনি বলেন, ‘দাম বেশি দেখে পাঁচ মণ পেঁয়াজ নিয়ে আসছি। গত হাটে যে পেঁয়াজ ৩২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে, সেখানে একই পেঁয়াজ আজ ২৩০০ টাকা দাম বলছে। কী করবো ভাবছি। যেহেতু গাড়ি ভাড়া করে হাটে পেঁয়াজ নিয়ে আসছি, তাই বিক্রি তো করতেই হবে।’
মধুখালী উপজেলা সদর বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আড়তের মালিক মো. আলম বলেন, ‘স্থানীয় বিভিন্ন হাটে-বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। হঠাৎ করে কয়েকগুণ দাম বাড়ার পর আবার হঠাৎ দরপতন হয়েছে। মোকামে চাহিদা কম। আমদানির খবর শুনেই মূলত পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে প্রতিমণে হাজার টাকা কমেছে। দেশের কৃষকদের ঘরে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। সেক্ষেত্রে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখাই ভালো।’
এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তর ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করা হচ্ছে। অবৈধ ব্যবসায়ী, অধিক মুনাফালোভী ও বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার পরিস্থিতির বিষয়েও আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।’
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফরিদপুরে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে জেলায় মোট ৪০ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে মোট ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। আর চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে ৩৫ হাজার ৮৭৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে দামের বিষয়টিতে আমাদের তো কোনো হাত নেই। আমরা ভালো ফলনে এবং বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ ও সহোযোগিতা করে থাকি।’
ঢাকা বিজনেস/এম