২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



ইতিহাসে ক্রিসমাস ট্রি

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ০৬:৩৫ পিএম
ইতিহাসে ক্রিসমাস ট্রি


খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘বড়দিন’ উদযাপনের আরেকটি অনুষঙ্গ হচ্ছে ‘ক্রিসমাস ট্রি’। এটিকে সুখ ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। মনে করা হয়, চির সবুজ দেবদারু জাতীয় এই গাছ অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটায়। ফলে এই গাছকে সুন্দর করে সাজালে ঘরে সমৃদ্ধি বাড়ে বলেও মনে করা হয়। 

‘ক্রিসমাস ট্রি’র জন্য যে গাছটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সেটি হলো ফার গাছ। এটি মূলত দেবদারু জাতীয় গাছ। এছাড়া ঝাউ জাতীয় গাছও ক্রিসমাস ট্রি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ক্রিসমাস ট্রি সত্যিকারের হতে পারে আবার সেটি কৃত্রিমও হতে পারে। ‘ক্রিসমাস ট্রি’তে আলোর ব্যবহার ছাড়াও বিভিন্ন অর্নামেন্ট দিয়ে সাজানো হয়। এই গাছের ওপরে একটি তারা বা স্বর্গদূত বসানো হয়। এই স্বর্গদূতটি বেথলেহেমে জন্ম নেওয়া যিশুখ্রিষ্টের প্রতীক।

সবুজ গাছে হরেক রকম জিনিস ঝোলানোর পরে যখন লাইটগুলো জ্বলে আর নেভে তখন পুরো গাছটাকে দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগে। আপেল, পাখি, মোমবাতি, ঘুঘু , মাছ, ফুল, ফল আর স্বর্গদূত দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর মজাটাই আলাদা। নানা রংয়ের আলোয় সাজানো এই ক্রিসমাস ট্রির সৌন্দর্য মোহিত করে। 


বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো এবং উপহার দেওয়ার শুরু কীভাবে হয় তার সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে, এ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে বিভিন্ন গল্প। এমন একটি গল্প হলো রোমের এক গরিব কাঠুরের ঘরে একদিন এক শীতার্ত শিশু হাজির হয়। কাঠুরে দম্পতি ছিল যিশুভক্ত। তারা শিশুটিকে আদর করে খাওয়ালেন, নরম বিছানায় শুতে দিলেন। সকালে ওই শিশু দেবদূতের রূপ ধরে বলল, ‘আমিই যিশু’। তাকে আদর-আপ্যায়ন করার জন্য কাঠুরে দম্পতিকে তিনি একটি গাছের ডাল দিলেন এবং তা মাটিতে পুঁতে রাখতে বললেন। এরপর ক্রিসমাসের দিন দেখা গেলো ডালটি সোনালি আপেলে ভরে গেছে। তখন তারা এ গাছের নাম দেন ‘ক্রিসমাস ট্রি’।

একদিন এক গরিব শিশু এক গির্জার মালিকে কিছু পাইন গাছের চারার বিনিময়ে পয়সা দেয়ার অনুরোধ করল। মালি গাছগুলো নিয়ে গির্জার পাশে পুঁতে রাখল। ক্রিসমাসের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখল, গাছগুলো গির্জার চেয়েও বড় হয়ে গেছে এবং সেগুলো থেকে অজস্র তারার আলো ঝরে পড়ছে। মালি তখন গাছগুলোর নাম দিল ‘ক্রিসমাস ট্রি’।

খ্রিস্টান লোক বিশ্বাস অনুসারে, ‘ক্রিসমাস ট্রি’র ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে জার্মানির গেইসমার শহরের এক সাধু বনিফেসের সঙ্গে। সেইন্ট বনিফেস (৬৭২-৭৫৪ সালে) একটি প্রাচীন ওক গাছের মূলে একটি দেবদারু জাতীয় ফার গাছ বেড়ে উঠতে দেখেন। তিনি এটাকে যিশুখ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাসের চিহ্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

ঐতিহ্য অনুসারে, ২৪ ডিসেম্বর ক্রিসমাস সন্ধ্যার আগে ট্রি সাজানো যায় না। আর এটি সরিয়ে ফেলা হয় ১২তম রাতে অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি। আর অনেকেই মনে করেন এই নিয়ম না মানা হলে অমঙ্গল হতে পারে। তবে প্রথাগতভাবে না হলেও এখন ক্রিসমাস ট্রি আরও আগে সাজানো হয়। জার্মানিতে এটা ঐতিহ্য অনুসারে ২৪ ডিসেম্বরে সাজানো হয় এবং ৭ জানুয়ারি খুলে ফেলা হয়। ক্যাথলিকদের রীতিতে এটি জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত সাজিয়ে রাখা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় এটি ডিসেম্বরের শুরুতে সাজিয়ে গ্রীষ্মের ছুটি পর্যন্ত রাখা হয়।


১৭৮১ সালে ক্রিসমাস ট্রির প্রচলন শুরু হয় কানাডায়। এসময় কানাডার কুইবেকে বার্নসউইক সৈন্যদের হাত ধরে এটির শুরু। জেনারেল ফ্রেডরিক অ্যাডলফ রিডেসেল এবং তার স্ত্রী ব্যারোনেস ভন রিডেসেল সোরেলে একটি ক্রিসমাস পার্টির আয়োজন করেছিলেন। সেখানে তারা একটি ফার গাছ মোমবাতি এবং বিভিন্ন ফল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছিলেন। ১৯ শতকের শুরুতে এই প্রথা রাশিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। রাশিয়ার প্রিন্সেস হেনরিয়েটা অফ নাসু ওয়েলবার্গ ১৮১৬ সালে ভিয়েনায় ক্রিসমাস ট্রিকে পরিচয় করিয়ে দিলে অস্ট্রিয়াতেও এর প্রচলন শুরু হয়। এরপর ফ্রান্সে ১৮৪০ সালে ডাচেস ডিওরলিয়েন্স এই ট্রির প্রচলন ঘটান।

ব্রিটেনে এই প্রথার প্রচলন ঘটে তৃতীয় জর্জের সময়ে। এদিকে, কুইন ভিক্টোরিয়া তার ছোটোবেলাতেই এই প্রথার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। ১৮৩২ সালে ‘ক্রিসমাস ইভ’ নামের সাময়িকীতে সে সময় ১৩ বছর বয়সী রাণী ভিক্টোরিয়া লিখেছিলেন, ‘ডিনারের পর আমার ড্রয়িং রুমে গিয়েছিলাম। সেখানে দুটি বড়ো রাউন্ড টেবিল ছিলো। আর এই টেবিলের ওপর দুটি গাছ লাগানো ছিলো। সেই গাছে বিভিন্ন আলোকসজ্জা এবং চিনির অলংকরণ করা ছিলো।’

উইন্ডসর ক্যাসেলে বৃটিশ রাজপরিবারে ক্রিসমাস ট্রি নকশা করে কাটার প্রচলন হয়। এরপর সেখান থেকেই ক্রিসমাস ট্রি বিভিন্ন ডিজাইনে কাটা শুরু হয় এবং এরপর তা সব জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়ে।


নানা দেশে নানা প্রজাতির গাছকে ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে সাজানো হয়। তবে মূল ক্রিসমাস টি হিসেবে বিবেচনা করা হয় Picea abies নামক গাছকে। এই  গাছটির আদি নিবাস ইউরোপ। তাই গাছটিকে সাধারণভাবে বলা হয় European spruce। অনেক সময় একে Norway spruceও বলা হয়। এর গণের নাম Picea, গ্রিক Pissa শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে। কিন্তু শব্দটি সাধারণভাবে ইউরোপে Picea বলতে পাইন গাছকে বোঝায়। আর abies হলো ফার জাতীয় গাছের সাধারণ নাম। এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল চিরোসবুজ বৃক্ষ। যা লম্বায় প্রায় ৩৫-৫৫ মিটার (১১৫-১৮০ ফুট) লম্বা হয়ে থাকে। এদের পাতা সুচের মতো। পাতার রঙ গাঢ় সবুজ। সূত্র: অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন আর্টিকেল থেকে তথ্য নিয়ে লেখা। 

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন