২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার



খুলনায় কুমড়োর বড়া তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা

রেজাউল ইসলাম তুরান, খুলনা || ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:১২ এএম
খুলনায় কুমড়োর বড়া তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা


খুলনার ৯টি উপজেলার গ্রামে গ্রামে কুমড়োর বড়া তৈরির ধুম পড়েছে। নিজেদের খাওয়ার জন্য এগুলো তৈরি করে থাকে বেশিরভাগ পরিবার। আবার অনেক পরিবারের কাছে এই বড়া তৈরি জীবিকার অন্যতম মাধ্যম।

শীতের ভোরে গ্রামগুলোতে নারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন বড়া তৈরির কাজে। দলবেঁধে কাজ করছেন তারা। মাষকলাই ভিজিয়ে রাখার পর সেটি দিয়ে ডালের আটা ও পাকা চাল কুমড়ো মিশিয়ে এ সুস্বাদু বড়া তৈরি করা হয়। মাটিতে মাদুর বিছিয়ে, আঙিনায় মাচা তৈরি করে সেগুলো রোদে শুকানো হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকার বেশিরভাগ নারী পালাক্রমে কুমড়ো বড়া দেওয়ার কাজটি করে থাকেন।

খুলনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, এই অঞ্চলের নারীরা বড়া তৈরি করতে কয়েক মাস আগে থেকে চাহিদা মতো চাল কুমড়ো পাকানোর ব্যবস্থা করে থাকেন। এরপর মাষকলাই দিয়ে তৈরি করা হয় এই সুস্বাদু খাবারের অংশবিশেষ বড়া। এগুলো তৈরিতে মূলত চালকুমড়া এবং মাষকলাইয়ের ডাল প্রয়োজন হয়। মাষকলাইয়ের ডাল ছাড়াও অন্য ডালেও তৈরি হয় এ বড়া। রোদে মচমচে করে শুকালেই এর ভালো স্বাদ পাওয়া যায়।

খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আকলিমা খাতুন বলেন, কুমড়োর বড়া তৈরিতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। রাত জেগে শীলপাটায় কেজি কেজি ডাল বাটা সহজ কাজ নয়। তবুও কষ্ট করে আমাদের বড়া তৈরি করতে হয়। শীত মৌসুমে এ বড়া তৈরি করে সারাবছর আমরা এগুলো নিয়ে বিভিন্ন প্রকার তরকারি রান্না করে খেয়ে থাকি। এছাড়া অনেকে আছেন, যারা বাড়িতে বসে বড়া তৈরি করে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করেন।

রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের জেসমিন বেগম জানান, শীতের সময় মূলত বড়া তৈরি করা হয়। নিজেরা খাওয়াসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও পাঠানো হয়।


বড়া তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তেরখাদা উপজেলার বারাসাত এলাকার বাসিন্দা লতি বেগম জানান, বড়া তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর চালকুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহিকুচি করে রাখতে হবে। তারপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া হলে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারারাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে। পরে ডালের পানি ছেঁকে শিলপাটায় বেটে নিতে হবে। এবার ডালের সঙ্গে কুমড়া মেশাতে হবে। খুব ভালো করে হাত দিয়ে মিশাতে হবে যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়। তারপর কড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ার আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে হবে। বড়া তিন থেকে চার দিন এভাবে রোদে শুকানোর পর তা অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।

খুলনার পালেরহাট বাজারে কুমড়ো বড়া বিক্রি করতে আসা আব্বাস আলী বলেন, বাড়িতে বড়া তৈরি করা হয়। এতে আমার স্ত্রীর পাশাপাশি মেয়েরাও সহযোগিতা করেন। বড়া শুকিয়ে গেলে সেটি আমি বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিক্রি করে থাকি।

রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, শীতকালে এই বড়া তৈরি করতে উপজেলার মহিলারা অনেক ব্যস্ত সময় পার করেন। কুমড়ো বড়া একটি সুস্বাদু খাবার। অনেক নারী কুমড়ো বড়া তৈরি করে বাড়তি আয় করে থাকেন। গ্রামীণ নারীরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা পেলে তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।

তুরান/এম



আরো পড়ুন