২৫ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার



ডিম দিয়েছে খানজাহান আলী দীঘির কুমির, আগ্রহ নেই ফকিরদের

বাগেরহাট সংবাদদাতা || ২৭ এপ্রিল, ২০২৩, ১১:০৪ এএম
ডিম দিয়েছে খানজাহান আলী দীঘির কুমির, আগ্রহ নেই ফকিরদের


বাগেরহাটের আধ্যাত্মিক সাধক হযরত খানজাহান আলী (রহ.) -এর মাজার সংলগ্ন দীঘিতে থাকা মিঠাপানির মা কুমির প্রায় ৫০-৬০টি ডিম দিয়েছে। তবে, তা নিয়ে আগ্রহ নেই ফকিরদের। কারণ এর আগেও অনেকবার এই মা কুমির ডিম পাড়লেও কোনো বাচ্চা ফোটেনি।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) খান জাহান আলী দিঘির পাড়ে কুমিরে ডিম পাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শেরে আলী।

জানা গেছে, বারবার ডিম দিলেও বাচ্চা না ফোটার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, বয়সের কারণে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় মাজারের কুমিরের ডিমে বাচ্চা ফুটছে না।  

খানজাহান আলী (রহ.) -এর মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, ‘ধারণা করছি প্রায় মাস খানেক আগে কুমিরটি দীঘির পূর্ব পাড়ের বিনা ফকিরের বাড়ির পাশে ডিম পেড়েছে। কয়েকদিন আগে আমাদের চোখে পড়েছে। এ বার নিয়ে অনেকবার এই মা কুমিরটি দীঘির পাড়ে ডিম পেড়েছে। কিন্তু কখনো বাচ্চা ফোটেনি। এভাবে বাচ্চা না হলে কুমিরের বংশ বাড়বে না। মাজারের দীঘি থেকে মিঠাপানির কুমির হারিয়ে যাবে।’ ফলে মাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, বয়সের কারণে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় দীঘিতে থাকা মিঠাপানির কুমির দুটি বারবার ডিম দিলেও কোনো বাচ্চা হচ্ছে না। এছাড়া এখানে থাকা কুমিরদের খাবারের বিষয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মাজারে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীরা খাবার হিসেবে যে যার মতো চর্বিযুক্ত মাংস দেন। ফলে কুমির দুইটির পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেছে। বাচ্চা না ফোটার এটাও অনেক বড় কারণ। তবে নতুন করে অল্প বয়সী দুইটি নারী-পুরুষ কুমির দীঘিতে ছাড়তে পারলে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব বলে আশা করেন এ কর্মকর্তা।  

সুলতানী শাসন আমলে খ্রিস্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে হযরত খানজাহান আলী (রহ.) বাগেরহাটে ৩৬০টি দীঘি খনন করেন। এর মধ্যে সব থেকে বড় ‘ঠাকুর দীঘি’, স্থানীয়দের ধারণা এই দীঘির আয়তন ৩৬০ একর। যা আজ খানজাহান আলী দিঘি নামে পরিচিত। এ দীঘির পাড়ে তার সমাধি রয়েছে। এই দীঘিতে তিনি দুইটি মিঠাপানির প্রজাতির কুমির এনেছিলেন। যাদের নামছিল ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’। খানজাহান (রহ.) -এর মৃত্যুর পর মাজারের খাদেম ও ভক্তরা ওই কুমির দুইটিকে নিয়মিত খাবার দিতেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ওই কুমির যুগলের বংশ ধরেরা এখানে বসবাস করছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময় এই দীঘির কুমির মারা যাওয়ার পরে মাত্র দুইটি কুমির ছিল। 

এরই মধ্যে মাজারের দীঘিতে মিঠাপানির কুমিরের বংশ বিস্তারের জন্য ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ থেকে ছয়টি কুমির এনে এখানে ছাড়া হয়। মাদ্রাজি কুমির হিংস্র প্রকৃতির ছিল। তাদের মারামারির কারণে হযরত খানজাহান (রহ.) -এর আমলের একটি কুমির ‘কালাপাহাড়’ অসুস্থ হয়ে ২০০৬ সালে মারা যায়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে অবশিষ্ট একটি কুমির ধলা পাহাড়ের মৃত্যু হয়। এর মধ্য দিয়ে খানজাহান আলী (রহ.) -এর আমলের কুমির যুগের সমাপ্তি ঘটে। এই সময়ে মাদ্রাজ থেকে আনা ৬টি কুমিরের ৪টি কুমির মারা যায়। বর্তমানে মাজার দীঘিতে দুইটি কুমির রয়েছে।

বাপ্পা/এইচ



আরো পড়ুন