সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ছোট-বড় ২৩ হাওরে বোরো ফসলের বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। হাওরে এবারের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা হয়েছে বোরো ফসলের সঙ্গে। দিনরাত ধান মাড়াই আর শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তবে, ধানের ন্যায্যমূল্য মিলবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। এদিকে, ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষকরা জানান, ডিজেল-কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকটসহ বোরো আবাদের শুরু থেকে চারা রোপণ, জমিতে চাষ, সেচ দেওয়া, ধানকাটা, মাড়াই ও শুকানো পর্যন্ত যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, ধান বিক্রি করে তা উঠে আসে না। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷
স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রতিবছরই সুবিধাবাদী মহল সিন্ডিকেট তৈরি করে তাদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে নেয়। এরপর বেশি দামে বাজারে বিক্রি করে। এতে দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ ও কৃষকরা পড়েন মহা-বিপাকে।
উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকখিলা গ্রামের কৃষক শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এবার বোরো ধানে ফলন খুবই ভালো হয়েছে। এখন সবাই ধান কাটা, মাড়াই আর শুকানোর কাজে ব্যস্ত। এত কষ্ট করেও সঠিক মূল্য আমরা কৃষকরা পাই না। এতে কৃষকরা ধান উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবে।’
লামাগাও গ্রামের কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সপ্তাহের মধ্যেই হাওরের ফসল ঘরে উঠবে। কৃষিবান্ধব সরকার ধানের সন্তোষজনক মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও খুচরা পর্যায়ে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০ টাকায়৷’
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৩৯৩ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ৮০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি চাল উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ২৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ধান উৎপাদনের দিক থেকে তাহিরপুর উপজেলা শীর্ষে রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দৌলা জানান, ‘উপজেলার সবক’টি হাওরে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন পর্যন্ত হাওরে ৬০ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন হাওরে বোরো ধান কাটায় নিয়োজিত ৬০ টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ধান কাটছে। আশা করছি, শ্রমিক সংকট হবে না। তাছাড়া এবছর বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘কৃষকদের কষ্টের ফসলের ন্যাযমূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যেন তারা লাভবান হন। না হলে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/