আরেক স্বপ্ন পূরণের পথে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ভাঙা-মাওয়া পরীক্ষামূলক রেল চলবে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল)। আর ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত সরাসরি যাত্রী নিয়ে রেলপথে ট্রেন চলবে সেপ্টেম্বরে। তবে আগামী বছর ট্রেন চলবে ঢাকা-যশোর রেলপথে। পদ্মা সেতু ঘিরে দেশের আধুনিক রেল নেটওয়ার্কের খবরে আনন্দে উচ্ছ্বসিত পদ্মা পাড়ের মানুষ।
পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহম্মেদ বলেন, ‘গ্যাংকার দিয়ে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত সাড়ে ৪১ কিলোমিটার রেলপথ পরীক্ষা করে দেখবো। এ পথে ডিজাইন স্পিড ১২০ কিলোমিটার থাকলেও ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে টেস্ট-রান চালানো হবে।’
তিনি জানান, পদ্মা সেতুর রেলপথ চালু আরও এক শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি করবে। ট্রান্স এশিয়া রেলপথের সঙ্গে এ লাইনটি যুক্ত হবে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদার চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)। আর পুরো প্রকল্প তদারকি করছে সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাংকার ট্রেনটি ভাঙ্গা থেকে রওনা হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাওয়া আসবে। ট্রেনটি মূলত নির্মিত রেলপথ ইন্সপেকশনের কাজে ব্যবহার করা হয়। এই ট্রেনে ভ্রমণ করে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন নির্মিত রেলপথসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজ পরিদর্শন করবেন। পুরোপুরি চালু হওয়ার আগে এ রেলপথ দিয়ে আমরা প্রকল্পের বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করবো।’
তিনি জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। অন্যদিকে প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ‘ওয়ান-ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের ওপর ভিত্তি করে প্রাক্কলনটি তৈরি করেছে সিআরইসি।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা পুরনো রেল স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলক ট্র্যাককারটি রওনা হওয়ার কথা রয়েছে দুপুর ১২টায়। আর এটি পদ্মা সেতু অতিক্রিম করে দুপুর ২টায় মাওয়া স্টেশনে এসে পৌঁছাবে। এই ট্রেনে থাকবেন রেলপথমন্ত্রী নরুল ইসলাম সুজন এমপি। আনুষ্ঠানিকভাবে এই ট্রেনই প্রথমবারের মত সেতু অতিক্রম করছে। তবে ২৯ মার্চ সেতুর ২৫ নম্বর খুঁটির কাছে বাকি থাকা ৭ মিটার রেলপথ নির্মাণ শেষ হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পরও রেল ট্র্যাক মহড়া হিসাবে সেতুতে চলাচল করেছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছেন। পদ্মার দুইপাড়ের মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস বইছে এখন।