১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

সোনার দামে ঘন-ঘন পরিবর্তনে কার লাভ, কার ক্ষতি

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ০৩ এপ্রিল, ২০২৩, ১২:৩৪ পিএম
সোনার দামে ঘন-ঘন পরিবর্তনে কার লাভ, কার ক্ষতি


ঘনঘন সোনার দাম পরিবর্তনের কারণে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অতিরিক্ত দাম ও রমজান মাসে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় সোনার বিক্রি আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে।  সোনার দাম বাড়লেও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি, কমলেও ক্ষতি। 

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)-এর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৭ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩৩ বার সোনার দাম পরিবর্তন হয়েছে।  সেখানে আরও দেখা গেছে কোনো কোনো মাসে একাধিকবার পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে দাম কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে। যদিও চলতি বছরের রোববার (২ এপ্রিল) দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে না হতে সেই ওয়েবসাইট থেকে সোনার দাম  পরিবর্তনের তথ্য সরিয়ে ফেলে বাজুস।

এদিকে, সর্বশেষ শনিবার (১ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে। সব থেকে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৭২৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে ২২ ক্যারেটের প্রতি গ্রাম সোনার মূল্য ৮ হাজার ৫০০ টাকা। সে অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা বিক্রি হচ্ছে ৯৯ হাজার ১৪৪ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি গ্রাম সোনা ৮ হাজার ১১৫ টাকা। সে অনুযায়ী প্রতি ভরি বিক্রি হচ্ছে ৯৪ হাজার ৬৫৩ টাকা। এছাড়াও ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৮১ হাজার ১২৩ টাকা এবং সনাতন সোনার প্রতি ভরি বিক্রি হচ্ছে ৬৭ হাজার ৫৯২ টাকা।

ওয়েবসাইট থেকে সোনার মূল্য পরিবর্তনের ডাটা সরিয়ে ফেলা প্রসঙ্গে বাজুসের এডমিন তানভির ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ওটা অসমাপ্ত আপডেট। তাই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে সর্বশেষ নির্ধারিত সোনার মূল্যের তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে।’ তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে সোনার মূল্য পরিবর্তনের ডাটা আপডেট ওয়েবসাইটে দেওয়া নেই। কারণ কয়েক বছর ধরে যখনই সোনার মূল্য পরিবর্তন হয়, তখনই সেই তথ্য আমরা বাজুসের মিডিয়া গ্রুপে দিয়ে দেই। কিন্তু গত প্রায় আড়াই বছরে মোট কতবার সোনার মূল্য পরিবর্তন হয়েছে, সেই মোট সংখ্যাটা আমার জানা নেই। একসঙ্গে গ্রুপেও সংখ্যাটা দেওয়া হয়নি। পৃথক পৃথকভাবে দেওয়া আছে। তবে কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে সংখ্যাটা পাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অনেক সময়ের ব্যাপার।’

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দর ঘন ঘন পরিবর্তনের কারণে স্থিরভাবে ব্যবসা করতে পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। একটি স্থির দাম থাকলে সে অনুযায়ী ব্যবসা করা সহজ হয়। কিন্তু ঘন ঘন দাম পরিবর্তনের ফলে অনেক অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। আবার এই পরিস্থিতিতে ঘাটতিতেও ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। 

সোবহান জুয়েলার্সের মালিক এ. সোবহান মণ্ডল ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বর্তমানে ব্যবসায় লাভ নেই। বাকি যাচ্ছে বেশি। সোনার দাম কমে গেলে ক্রেতারা সোনার অর্ডার বিভিন্ন অজুহাতে বাতিল করে দিয়ে টাকা উঠিয়ে নিয়ে যায়। আবার দাম বাড়লে আমাদের ঘাটতিতে বিক্রি করতে হয়। দাম কমলেও আমাদের ক্ষতি, বাড়লেও ক্ষতি। কিন্তু এই দামটা যদি এত ঘন ঘন পরিবর্তন না হয়ে দীর্ঘসময় পর পর পরিবর্তন হতো, তবে শান্তিতে ব্যবসা করা যেতো। কিন্তু সেটা বলে তো লাভ নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সোনার দাম নির্ধারণ করা হয়।’

অরিন জুয়েলার্সের মালিক এ.এস.এম ওবায়দুল্লাহ্ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সোনার মূল্য ঘন ঘন দাম পরিবর্তনের সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পরে আমাদের ব্যবসায়ীদের ওপর। আমরা টার্গেট অনুযায়ী ব্যবসা করতে পারিনি। এজন্য আমরা এখন ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডারের পুরো অর্থ রেখে অল্প সময়ের মধ্যে অলংকার বানিয়ে দিচ্ছি।  যেন ক্রেতারা অর্ডার দেওয়ার পর সোনার দাম পরিবর্তন হলে, টাকাটা উঠিয়ে নিতে না পারেন।’

 সোনা আমদানিকারকরা বলছেন, ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের একটি পলিসি আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন সোনার দাম বেড়ে যায়, তখন বাংলাদেশের বাজারেও দাম বাড়াতে হয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমির ওপর সোনার দাম নির্ধারণ করে। আর ওয়ার্ল্ড ইকোনমি কন্ট্রোল হয় ডলারের মাধ্যমে। ডলারের দাম যখন কমে যায়, তখন মানুষ সোনায় বিনিয়োগ বেশি করে। আর  সোনায় যখন বিনিয়োগ বাড়তে থাকে, তখন তর তর করে সোনার দাম বেড়ে যায়। আবার ডলারের দাম যখন বাড়তে থাকে, তখন মানুষ সোনা বাদ দিয়ে ডলারে বিনিয়োগ বেশি করে। ফলে সোনার দাম তখন কমতে থাকে। যার প্রভাব আমাদের সোনার বাজারেও পড়ে।

আমদানিকারকরা আরও বলছেন,  বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সোনা ও ডলারের মূল্য ঘন ঘন পরিবর্তন হচ্ছে। সোনার মূল্যের ঘন ঘন পরিবর্তনের ফলে মানুষের মধ্যে প্যানিক তৈরি হচ্ছে। তারা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি রমজান মাস হওয়ায় সোনার ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। সোনার দামে স্থিরতা থাকলে ব্যবসায় গতি চলে আসে। সোনার দাম মূলত নির্ধারিত হয় আমেরিকা থেকে। অভ্যন্তরীন বাজারে সোনার মূল্য স্থির রাখার সুযোগ নেই। কারণ বহির্বিশ্বে দাম বাড়লে অভ্যন্তরীণ বাজারেও বাড়াতে  হয়। দাম না বাড়ালে সোনা পাচার হয়ে যেতে পারে। 

বাজুসের জয়েন্ট সেক্রেটারি মাসুদুর রহমান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘দেশে সোনার যে রিফাইনারি হতে যাচ্ছে, সেটি চালু হলে আমাদের সোনা আমদানির প্রয়োজন হবে না। আমদানির চাহিদাটা রিফাইনারি থেকে মিটে যাবে। আমরা তখন রপ্তানি পলিসি নিয়ে অগ্রসর হতে পারবো। তখন সোনার বাজার অনেকটা স্থিতিশীল হবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন