১৯ মে ২০২৪, রবিবার



যেভাবে চলচ্চিত্রে ফারুক

বিনোদন ডেস্ক || ১৫ মে, ২০২৩, ১১:০৫ এএম
যেভাবে চলচ্চিত্রে  ফারুক


আকবর হোসেন পাঠান দুলু, কিন্তু চলচ্চিত্রে পোশাকি নাম ফারুক। অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, পরিচালক এইচ আকবর ও ফারুক নামে নিজের এক বন্ধু মিলে তাকে দিয়েছিলেন এই নাম। তিনি একাধারে একজন অভিনেতা, প্রযোজক, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। ফারুকের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট, মানিকগঞ্জে। কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে পুরান ঢাকায়। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। 

ফারুক চলচ্চিত্রে আসেন ১৯৭১ সালে। এইচ আকবর পরিচালিত 'জলছবি' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রুপালি জগতে পা রাখেন তিনি। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তার বিরুদ্ধে ৩৭ টি মামলা করে। আর সেই মামলা থেকে বাঁচতে তিনি চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। মূলত, বন্ধুবান্ধবরাই তাকে জোর করে চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় খান আতাউর রহমান পরিচালিত সিনেমা 'আবার তোরা মানুষ হ'। এরপর ১৯৭৫ সালে মুক্তি পায় নারায়ণ ঘোষ মিটার 'লাঠিয়াল'। এই ছবিতে তার চরিত্রের জন্য তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়। পরে তাকে পার্শ্বঅভিনেতার পুরস্কার দেওয়া হয়।

১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া আরেকটি সিনেমা মোড় ঘুরিয়ে দেয় ফারুকের ক্যারিয়ারের। 'সুজন সখী'শিরোনামের ওই সিনেমাটি মূলত মেলোড্রামাটিক ছবি/ গ্রামীন পটভূমির গল্প। কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন ফারুক। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ ছবিটির বাণিজ্যিক সাফল্য ফারুককে নায়ক হিসেবে আরও প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। ১৯৭৮ সালে ‘সারেং বৌ’ মুক্তি পায়। শহীদুল্লাহ কায়সারের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে আবদুল্লাহ আল মামুন নির্মিত এ  ছবিটির ‘কদম সারেং’ চরিত্রে জীবনঘনিষ্ঠ অভিনয়ের জন্য ক্ল্যাসিক অভিনেতা হিসেবে গণ্য হন। সে বছরই আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবিতে মিলন চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেন ফারুক। বিশেষ করে মৃত্যুর দৃশ্যে তার অভিনয় দর্শককে কাঁদায়।

১৯৭৯ সালে ফারুক হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান নায়ক। সে বছর তার অভিনীত ৩০টির বেশি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। বিশেষ করে গ্রামীণ তরুণের আইকন হয়ে যান তিনি। আজিজুর রহমান নির্মিত ‘জনতা এক্সপ্রেস’ ছবিতে নিজের শিশু সন্তানকে বলি দিয়ে ট্রেনযাত্রীদের জীবন বাঁচিয়েছেন এমন এক ট্রেনচালকের ভূমিকায় অসামান্য অভিনয় করেন ফারুক। ‘মিয়াভাই’ ছবিটি সাফল্য পাওয়ার পর দর্শকমহলে তার ‘মিয়াভাই’ নামটি জনপ্রিয়তা পায়। নব্বই দশকের শেষে কয়েকটি চলচ্চিত্রে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে দেখা যায় ফারুককে। তবে ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক ব্যস্ততার জন্য তিনি রুপালি পর্দা থেকে কিছুটা দূরে সরে যান। কিংবদন্তি এই অভিনেতা বলেন, বেশ কয়েকটি ছবির শেষ দৃশ্যে তার চরিত্রের মৃত্যুর কারণে অনেক চলচ্চিত্র বোদ্ধা তাকে ট্রাজিডি কিং হিসেবেও আখ্যা দেন। যেমন-গোলাপী এখন ট্রেনে, দোস্তী,  প্রতিজ্ঞা, লাল কাজল, নাগরদোলা প্রভৃতি। 

চলচ্চিত্রের বাইরে তিনি একজন ব্যবসায়ী। গাজীপুরে অবস্থিত নিজের শিল্প প্রতিষ্ঠান 'ফারুক নিটিং ডাইং এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 

তবে দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন চিত্রনায়ক ফারুক। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎস্বাধীন অবস্থায় ছিলেন তিনি। অবশেষে, সোমবার (১৫ মে, ২০২৩) মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ঢাকা বিজনেস/এন/  



আরো পড়ুন