২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের অর্জন নিয়ে যা বললেন তারা

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ২০ মার্চ, ২০২৩, ০৭:০৩ পিএম
বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের অর্জন নিয়ে যা বললেন তারা


সম্প্রতি দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে  অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিট নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর আয়োজনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই বিজনেস সামিটকে  ৯৯ ভাগ সফল আয়োজন বলে উল্লেখ করছেন তারা। তবে  এও বলছেন, দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো আগে ঠিক করতে হবে। না হলে এই ধরনের সামিট খুব একটা কাজে আসবে না। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন,  বিনিয়োগের ক্ষেত্রে  বিশ্বের সবচেয়ে উপযোগী জায়গা বাংলাদেশ। এ দেশে বি‌নিয়োগ করে যে কেউ সফল হ‌বে।  বিষয়টি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মতো বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বোঝেন। এ কারণে বি‌ভিন্ন দে‌শের মন্ত্রী, সরকা‌রের প্র‌তি‌নি‌ধি, ব্যবসায়ী, উদ্যক্তারা এই বিজ‌নেস সা‌মি‌টে যোগ দিয়েছেন। তারা বলছেন, তিন শতাধিক বি‌দে‌শি উদ্যোক্তা এই সামিটে যোগ দিয়েছেন। এরইমধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে চারটি ব্যবসায়িক চুক্তি হ‌য়েছে। সৌ‌দি আরব বি‌নি‌য়োগ কর‌বে বলে জা‌নি‌য়ে‌ছে। আরও কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ীরা  বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন। 

বিজনেস সামিটের অর্জন সম্পর্কে ফেরদৌস বায়োটেক প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফেরদৌসী বেগম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমরা কৃষি নিয়ে কাজ করি। এই সামিটের মাধ্যমে আমাদের মতো দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের পণ্য সম্পর্কে অবগত হয়েছে। এটাই এই সামিটের বড় অর্জন। প্রচারেই প্রসার। এই সামিটের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের সামনে বাংলাদেশের সক্ষমতা সম্পর্কে প্রচার করা হয়েছে। এর পুরো সফলতা আসতে সময় লাগবে। আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা আলটিমেট গোল ছিলো এই সামিটের। যেটাতে আমরা সফল হয়েছি।’

ড. ফেরদৌসী আরও বলেন, ‘বিদেশিরা আমাদের এই সামিট পছন্দ করেছে। তারা আমাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতো না। তারা এই সামিটের মাধ্যমে জেনেছে। বাংলাদেশ যে বিনিয়োগবান্ধব এই বিষয়টি ব্যবসায়ীরা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। হেলথ সেক্টর, টুরিজমসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিদেশিরা ইনভেস্ট করলে, তারা ইউরোপের ১০টি দেশের তুলনায় বেশি লাভবান হবে। এই বিষয়টি আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা বিষয়গুলো বুঝেছি।’

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘এই সামিটের একটা পজেটিভি দিক হচ্ছে দেশের ইমেজকে পজেটিভলি দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এটাই সামিটের অর্জন। আর এই দেশে ব্যবসা করতে গিয়ে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেসব বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে। এটাও একটা অর্জন।’ তিনি বলেন, ‘দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বিজনেস এনভায়রনমেন্ট ভালো করতে হবে। রেগুলেটরি এনভায়েরনমেন্ট ভালো করতে হবে। অর্থাৎ দেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলোকে ঠিক করতে হবে। শুধু বক্তব্য দিলে হবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সামিটের অর্জন আসলে পরিমাপ করা যাবে না। তবে এটা একটা ভালো ইভেন্ট ছিল। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এই ধরনের সামিট দরকার ছিল। যদিও ওয়াইডলি পার্টিসিপেটেড হয়নি। তারপরও বিদেশি বিনিয়োগকারী যতটুকু এসেছেন, এটাও অনেক। এটা এই সামিটের অর্জন। তবে বিদেশি বিনিয়োগ অনেক ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে। এই ফ্যাক্টরগুলো ঠিক করতে হবে। ঢাকা এয়ারপোর্টে এলেই মানুষের মন খারাপ হয়ে যায়। এরকম অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে। এগুলো ঠিক করতে হবে। এই ধরনের সামিট আগামীতেও আয়োজন করতে হবে।’

উদ্যোক্তা ও তারা’র প্রপাইটার নাদিয়া ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমরা যে অনেক সম্ভাবনাসময় একটি দেশে আছি, তা আমাদের পাশাপাশি বিদেশি উদ্যোক্তারাও জানতে পেরেছেন। আমরা দেশি উদ্যোক্তারা বিদেশি উদ্যোক্তাদের  সঙ্গে মত-বিনিময় করেছি। আমাদের সম্ভাবনাগুলো তারা জানতে পেরেছেন। তাদের সম্ভাবনাগুলোও আমরা জানতে পেরেছি। সামগ্রিক অর্থে এটাই সামিটের অর্জন বা সফলতা।’

এফবিবিসিসিআই-এর সিনিয়র অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি জেনারেল শাহ আব্দুল খালেক ঢাকা বিজনেসকে বলেন,‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সক্ষমতাকে তুলে ধরা। সেটি সফল হয়েছে। এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি। আমাদের কোম্পানিগুলো তাদের প্রডাক্ট তুলে ধরেছে ব্যবসায়ীদের সামনে। তাদের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জল হয়েছে। এটাই আমাদের এবারের সামিটের অর্জন।’

উল্লেখ্য, এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বিজনেস সামিট গত ১১ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত চলে। এবারের সামিটে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাত দেশের মন্ত্রী, ১২ বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১৭ দেশের বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন