গতবছরের (২০২২) জুলাই থেকে সুগন্ধি চালের রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। দেশের বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে সুগন্ধি চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এরপর কেটে গেলো আট মাসেরও বেশি সময়। এখনো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়নি। তবে, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানির ঈদের পর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে গতবছরের জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে সব ধরনের সুগন্ধি চাল রপ্তানি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশের মোট ৪১টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউরোপ, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ১৩৬ দেশে সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতো।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছে, এই চালের রপ্তানি বন্ধ থাকলেও উৎপাদনে ও বিক্রিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। ফলে ঘাটতি না থাকায় স্বাভাবিক নিয়মেই বিক্রি হচ্ছে এই চাল। তবে কেউ কেউ বলছেন, করোনর সময়ে অনুষ্ঠান কম হয়েছে। করোনা-পরবর্তী অনুষ্ঠানের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে সুগন্ধি চালের বিক্রি এখন বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস আড়তের মালিক মো. আব্দুল আউয়াল তালুকদার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সুগন্ধি চালের বিক্রি তো কমেনি বরং বেড়েছে। করোনার সময় মানুষ বিয়ে, জন্মদিনসহ যাবতীয় অনুষ্ঠান কম করেছে। যে কারণে ওই সময় বিক্রিও কম ছিল। এখন বিক্রি বেড়েছে। বাজারে ঘাটতি নেই। সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে।’
প্রাণ আরএফএল গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার হুমাউন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সুগন্ধি চাল মার্কেটে এখন এভেইলেবল। কোনো সংকট নেই। আমাদের কাছেও পর্যাপ্ত আছে। আমরা অভ্যন্তরীণ বাজারে সুগন্ধি চাল পর্যাপ্ত সরবরাহ করছি। বিক্রির পরিমাণ স্বাভাবিক রয়েছে।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, মহাপরিচালক (বিজ) মো. আবু জুবায়ের হোসেন বাবলু ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমার জানা মতে, বর্তমনে সুগন্ধি চাল উৎপদন স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আমাদের থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরও ভালো বলতে পারবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক(ক্রপস উইং) স্বপন কুমার খাঁ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘মূলত বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কিছু কারণে সরকার আপাতত এই চাল রপ্তানি না করার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এই চালের উৎপাদন আগের মতোই স্বাভাবিক আছে। তবে সরকারের টার্গেট আছে আবারও রপ্তানি করার। সরকারও চায় এই চাল রপ্তানি করে কিছু অর্থ দেশে আসুক। বিদেশে এই চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর উৎপাদন সবসময় চলমান আছে। বিভিন্ন জাতের সুগন্ধি চাল যেন বেশি উৎপাদন হয়, সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সুগন্ধি চাল রপ্তানি সাময়িক বন্ধ রয়েছে। এই মুহূর্তে রপ্তানি করার কোনো সিদ্ধান্ত নেই। ঈদ-উল-আজহার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে খাদ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দেবে, সুগন্ধি চাল রপ্তানি করা যায় কি না। কোরবানির ঈদের পর যদি বিশেষ কোনো সংকট না থাকে, তবেই খাদ্য মন্ত্রণালয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম খান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘রপ্তানির বিষয়টি আসলে খাদ্য মন্ত্রণায়ের অনুরোধেই হয়ে থাকে। সুগন্ধি চাল রপ্তানিতে এখনো খাদ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দেয়নি। তারা রপ্তানির অনুরোধ জানালে ও সামগ্রিক চিত্র যদি পজেটিভ থাকে, তবেই পুনরায় সুগন্ধি চাল রপ্তানি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/