২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার



জানা-অজানা
প্রিন্ট

আফিম যুদ্ধ কী

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ০৭ মার্চ, ২০২৩, ০২:০৩ পিএম
আফিম যুদ্ধ কী


যুদ্ধ বিগ্রহ কোনোভাবেই কারও কাম্য নয়। কিন্তু, নানা কারণে এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। কিছু যুদ্ধ বিখ্যাত তকমা পেলেও কিছু যুদ্ধও আবার পেয়েছে কুখ্যাত তকমা। তেমনি একটি বানিজ্যিক যুদ্ধের নাম 'আফিম যুদ্ধ'। পৃথিবীর ইতিহাসের পাঁচটি কুখ্যাত বানিজ্যযুদ্ধে মধ্যে আফিম যুদ্ধ অন্যতম। যুক্তরাজ্য আর চিনের মধ্যে এই যুদ্ধটা হয়। 

বিশ্ব বানিজ্যব্যবস্থা সেই আদিকাল থেকেই বেশ জটিল। এখন জটিল থেকেও জটিলতর হয়েছে। ধরুন, আপনার কাছে কোন একটা পণ্য আছে আপনি বেচেই যাবেন। অন্যের কাছ থেকে বিনিময় প্রথা অনুসারে মূল্য আদায় করে নিবেন। কিন্তু তার কাছ থেকে আপনি কিছু কিনছেন না। তাহলে তার অর্থনৈতিক অবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে তাই নয় কি? এটা কে সামাল দিতে হলে অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরনের জন্য তার কাছে যা আছে তা আপনাকেও কিনতে হবে। এককথায়, আপনাকে তার খদ্দের বানাতে হবে। তাহলে সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। মূলত, ক্রেতা বিক্রেতার অর্থনৈতিক অসমতাই আফিম যুদ্ধের মূল কারণ।

ঘটনার সূত্রপাত ১৮ শতকের শেষদিকে। ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্রিটিশদের কাছে চীনের পোর্সেলিন, সিল্ক ও চায়ের চাহিদা ছিলো প্রচুর পরিমাণে। বিশেষ করে চা। কিন্তু বিনিময়ে অন্য দেশের পণ্যের বিষয়ে চীনাদের কোনো আগ্রহ ছিল না। তাই এখানে এক অসম ব্যবসায়ের সূত্রপাত ঘটে।

যেহেতু চীনকে দেওয়ার মতো ব্রিটিশদের কাছে অন্য কোনো পণ্য ছিলো না, সেহেতু চায়ের বিনিময়ে চীন সিলভার কয়েন দাবী করে। কারণ, চীনে শুধুমাত্র সিলভারেরই অপ্রতুলতা ছিল। আর সম্পূর্ণ চীনের শুধুমাত্র ক্যান্টন বন্দরে ব্রিটিশদের বাণিজ্য করার অনুমতি ছিল।  ধীরে ধীরে ব্রিটিশদের রাজকোষ ফাঁকা হতে শুরু করে।এরপর চীনের এই বিশাল বাজার দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা করে তারা। আর এই প্রেক্ষিতেই ব্রিটিশরা বের করে এক অভিনব উপায়। যা তাদেরকে বানিয়েছিল ইতিহাসের ভয়ংকর মাদক ব্যবসায়ী। 

সেসময় বাংলার মাটিতে শাক সবজির পাশাপাশি খুব ভালো পপি চাষ করা হতো। এই পপির বীজ থেকে পাওয়া যেত আফিম। যা মরফিন ও হেরোইন-এর প্রধান উপকরণ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চীনে আফিম বিক্রি শুরু করে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় চীনের কঠোর নিয়মনীতি। চীনে আফিমকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ফলে ব্রিটিশদের নিতে হয় অন্য এক পথ-মাদক পাচার। ধীরে ধীরে চীনের সৈনিক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগন আফিমে আসক্ত হতে থাকে। আর বাড়তে থাকে আফিমের চাহিদাও।

আফিম থেকে ব্রিটিশরা যে লাভ পেত সেই লভ্যাংশ ব্যবহার করেই চীনের কাছ থেকে চা কিনতে শুরু করে তারা। এতে ক্ষিপ্ত হন চীনের রাজা। তিনি চীন থেকে সকল ধরণের আফিম নষ্ট করার নির্দেশ দেন। তার আদেশেই ক্যান্টন বন্দরে প্রায় ১.২ মিলিয়ন কেজি আফিম নষ্ট করে ফেলা হয়। ফলে ব্রিটিশ আফিম ব্যবসায়ীরা বেশ ক্ষুব্ধ হয়। 

ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে ১৮৩৯ সালের দিকে ব্রিটিশরা চীনের সাথে যুদ্ধ শুরু করে। এটাই প্রথম আফিম যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৮৩৯ থেকে ১৮৪২ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এ যুদ্ধ। আফিমের নেশায় আসক্ত চীনা সেনাবাহিনী ব্রিটিশদের সামনে বলতে গেলে দাঁড়াতেই পারেনি। প্রথম আফিম যুদ্ধে চীনের পরাজয় ঘটে খুব সহজেই। ১৮৪২ সালের ২৯ আগস্ট নানকিং চুক্তির মাধ্যমে প্রথম আফিম যুদ্ধের অবসান ঘটে। এ চুক্তি অনুসারে ব্রিটিশদেরকে চীন সিলভার কয়েনে ২১ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়। সেই সঙ্গে ক্যান্টনের পাশাপাশি আরও ৪ টি বন্দর বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হয়। এভাবে চীনের একচেটিয়া ব্যবসার অবসান ঘটে। 

অনেকের মতে, আফিম যুদ্ধের পেছনে আফিম ছিল একটা অজুহাত মাত্র। মূলত চীনের ওপর ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবেরই প্রতিফলন হিসেবে শুরু হয়েছিলো এই আফিম যুদ্ধ।

ঢাকা বিজনেস/এন/ 



আরো পড়ুন