২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



ক্যাম্পাস
প্রিন্ট

নানা বিতর্ক কাঁধে নিয়েই জাবির সমাবর্তন শনিবার

আরিফুজ্জামান উজ্জল, জাবি || ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ০২:৩২ পিএম
নানা বিতর্ক কাঁধে নিয়েই জাবির সমাবর্তন শনিবার


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৬ষ্ঠ সমাবর্তন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন উচ্ছ্বাস দেখা গেছে, তেমনি সমাবর্তনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে সমালোচনায় মেতে উঠেছেন তারা। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় জটিলতা থেকে শুরু করে খাবারের মেনু ও সমাবর্তনের লোগো নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। পাশাপাশি নিয়মিতদের সঙ্গে উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। এ ছাড়া সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য নির্ধারিত নিবন্ধন ফি বেশি জানিয়ে তা কমানোর দাবি করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে সমবার্তনে নিবন্ধনকারী শিক্ষার্থীদের গাউনসহ উপহারসামগ্রী প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। এরপরই ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ দেখা যায়। গাউন পরে বিভিন্ন স্থানে দলবেঁধে ছবি তুলতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। তবে উচ্ছ্বাসের মধ্যেও সমাবর্তনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনায় মেতে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, শনিবার অনুষ্ঠিতব্য সমাবর্তন উপলক্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের জন্য একসঙ্গে ৪ হাজার টাকা ফি ধরা হয়। এছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পৃথকভাবে ২৫০০ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করা গেছে। আর এমফিল ডিগ্রির শিক্ষার্থীরা ৬ হাজার টাকা, পিএইচডি ৭ হাজার টাকা এবং সাপ্তাহিক কোর্সের সনদধারীরা ৮ হাজার টাকা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন। এই নিবন্ধন ফি অতিরিক্ত বলে দাবি করে ফি কমানোর আবেদন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সাপ্তাহিক কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া নিয়েও বিতর্ক উঠে। তবে এসব দাবি মানেনি প্রশাসন।   

এ ছাড়া সমাবর্তনে অতিথি এবং অংশগ্রহণকারীদের খাবার হিসেবে দেওয়া হবে একটি বান পিৎজা, এক স্লাইস কেক, সন্দেশ, চিকেন ফ্রাই, আপেল এবং পানি। ৩১১ টাকা মূল্যের এই খাবার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। মেনু জানার পরই সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক ফেসবুক গ্রুপ। এদিকে বিনা পারিশ্রমিকে লোগো তৈরির বিনিময়ে সমাবর্তনের প্যান্ডেলের আওতায় ১১ লাখ টাকার কাজ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. মহসিনের বিরুদ্ধে। এই লোগোর মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া কোনো টেন্ডার ছাড়াই ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাবর্তনের প্যান্ডেল তৈরি ও ৫৬ লাখ টাকার খাবার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে স্বর্ণপদকের ব্যবস্থা করা হয়নি।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমাবর্তনের সার্বিক বিষয় তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিবহন অফিসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি যানবাহন পাস ছাড়া কোনো ধরনের গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য চারটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।’

প্যান্ডেল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘আমরা খুবই অল্প সময় পেয়েছি। এত স্বল্প সময়ে টেন্ডার দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করা সম্ভব হতো না। তাই ডিপিএম (ডিরেক্ট পারচেজ মেথড) ব্যবহার করে প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে।’

সমাবর্তনের খাবারের বিষয়ে আপ্যায়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, ‘এবার গ্রাজুয়েট ও আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা বেশি হওয়ায় মধ্যাহ্ন ভোজের দিকে না গিয়ে আমরা প্যাকেটজাত নাস্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। বিকালের নাস্তা হিসেবে এটিকে যথেষ্ট বলে মনে হয়েছে। এ ছাড়া খাবার বিতরণের জন্য ৪টি বুথ স্থাপন করা হবে।’

এদিকে উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ‘অন্য বিশ্বদ্যিালয়ে উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনে অংশ নিতে পারে। যেহেতু তারাও আমাদের শিক্ষার্থী, তাই সমাবর্তনে অংশ নিতে তাদের কোনো বাঁধা নেই।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নুরুল আলম বলেন, ‘উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ৬ষ্ঠ সমাবর্তন আয়োজনের সংকল্প ব্যক্ত করেছিলাম। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে সমাবর্তন আয়োজন করতে পেরে আমি অভিভূত। সমাবর্তন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেবো এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।’

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন