২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

ব্রয়লার মুরগি-ডিমের দাম বাড়লো কেন

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ১১:৩২ পিএম
ব্রয়লার মুরগি-ডিমের দাম বাড়লো কেন


ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতা সাধারণ বিপাকে পড়লেও পেঁয়াজ ও রসুনের দামে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন তারা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, ব্রয়লার মুরগি ও ডিম কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ ক্রেতাদের।  একসময় ব্রয়লার মুরগির দাম কম থাকায়  নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পছন্দের খাবার ছিল। কিন্তু যে হারে ব্রয়লার মুরগির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে এই শ্রেণীর পছন্দের খাবারের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে পণ্য দুটি। এখনো কষ্ট করে অল্প পরিমাণে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম কিনছেন সাধারণ ক্রেতারা। তবে এভাবে দাম বাড়তে থাকলে, এক সময় আসবে যখন নিম্নবিত্তের ব্রয়লার মুরগি ও ডিম কেনা থেকে বিরত থাকবেন।

রাজধানীর কাওরান বাজারে মুরগি কিনতে এসেছেন মো. ওসমান গনি। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষদের এখন ফার্মের মুরগি কেনা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ একসময় দাম কম থাকায় আমাদের প্রথমে পছন্দের তালিকায় ছিল ব্রয়লার মুরগি। যে ওজনের ব্রয়লার মুরগি আগে ২১০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় কিনতে পারতাম, এখন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ২০ দিন আগেও ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকা কেজি দরে কিনতাম। এখন ১ কেজি কিনতে হচ্ছে ৩২০ টাকায়। যা আমাদের জন্য কষ্টকর হচ্ছে।’



রাজধানীর কাঠালবাগান থেকে কাওরান বাজারে ফার্মের ডিম কিনতে এসেছেন আব্দুল জলিল। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘লাল মুরুগির ডিম সাড়ে ৭ হালি কিনেছি ৩৪০ টাকা দিয়ে। লাল, সাদা উভয় ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে। অথচ একসপ্তাহ আগেও ফার্মের মুরগির লাল ডিমটি প্রতি হালি ৪৩ টাকায় কিনেছি। আর এখন সেই ডিম কিনতে হচ্ছে ৪৮ টাকায়। পাশাপাশি সাদা ডিম প্রতি হালি ৪০ টাকায় কিনতাম, এখন ৪৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে।’

ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা মো. ইসমাইল হোসেন। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমার আগেও ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। অথচ সেই মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা দরে। আমরা কী করবো? আমাদের ২১৮ টাকা কেজি দরে মুরগি কিনতে হচ্ছে পাইকারদের কাছ থেকে। আমাদের তো কিছু লাভ করতে হবে।’

কাওরান বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা আব্দুল কাইয়ুম তারেক। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২২৫ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি করছি। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি মুরগি ২১০ থেকে ২১৫ টাকায় বিক্রি করেছি। আমি ২২২ টাকা কেজি দরে পাইকারদের কাছ থেকে ব্রয়লার মুরগি কিনছি।’

রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারেরে রাশেদ স্টোরের প্রপাইটর মো. ইসমাইল ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘প্রতি হালি ডিম ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এক সপ্তাহ আগেও এই ডিম ৪৩ টাকায় বিক্রি করেছি।’

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব)-এর জেনারেল সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘মুরগি ও ডিমের দাম বাড়তে পারে। তবে যেহারে বেড়েছে এই হারে বাড়ার কথা নয়। এখানে বিশেষ একটি মহল কারসাজি করে এই দুই পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। খামারিরা বলছেন, খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে মুরগির দাম বেড়েছে। কিন্তু খাদ্যের দাম যেহারে বেড়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি হারে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। পাশাপাশি ফার্মের মুরগির দামও অনেক বেশি পরিমাণে বেড়েছে। সরকারের উচিত মনিটরিং করে এই দাম সাধারণ  ক্রেতার নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার চাইলেই সেটা করতে পারবে।’



ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ(টিসিবি)-এর অ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর মো. নাসিরউদ্দিন তালুকদার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কারসাজি করে বাড়ানো হয়েছে। তবে মুরগির দামে কারসাজি করা হয়নি। কারণ মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মুরগির দাম বেড়েছে।  ১৫ দিনের মধ্যে মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে।’

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমরা কি মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেবো? এই ক্ষমতা তো সরকার আমাদের দেয়নি। আমি কিভাবে বুঝবো বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুরগি ও ডিমের দাম কত হওয়া উচিত। এখন সরকারের কোনো মন্ত্রণালয় যদি এসবের দাম ঠিক করে দেয়, সেক্ষেত্রে আমরা মনিটরিং করতে পারি। এখন বিক্রেতারা বলছেন, তাদের প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকায় কিনতে হয়। সেক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি?’

সফিকুজ্জমান আরও বলেন, ‘তবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতীতে মুরগির দাম বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সঙ্গে মুরগির দাম বৃদ্ধি বাড়ানো ছিলো অযৌক্তিক। তাই তখন আমরা মনিটরিং করেছিলাম। এখন সরকার মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিক। ব্যবসায়ীারা নির্ধারিত দামে এসব পণ্য বিক্রি করছে কি না,  আমরা মনিটরিং করবো। এখন মনিটরিং করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন