চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আর্থিক চাপে এই প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’-এ এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়লেও তা হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী পূর্বাভাসের তুলনায় কম।
এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিও দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে, যা গত অক্টোবরে করা পূর্বাভাসের চেয়ে ০ দশমিক ৪ শতাংশ কম। তবে ২০২৬ সালে এটি ৬ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকে টেকসইভাবে এগিয়ে নিতে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এ অঞ্চলে কর আদায়ের হার উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় তুলনামূলক বেশি হলেও প্রকৃত কর আদায়ের হার অনেক কম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০২৩ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার গড় সরকারি রাজস্ব ছিল জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য উন্নয়নশীল অঞ্চলে এই হার ২৪ শতাংশ। কর ব্যবস্থার দুর্বলতা, অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি ও কৃষি খাতের আধিপত্যকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওন্সর্জ বলেন, 'নিম্ন রাজস্বই দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক দুর্বলতার মূল কারণ। এটি বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।'
অঞ্চলের অন্যান্য দেশের প্রবৃদ্ধি নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে, নেপালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তা দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে। পাকিস্তানে প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
ভারতের ক্ষেত্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যা পরবর্তী অর্থবছরে কিছুটা কমে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসবে।
ভুটানে কৃষি খাতের দুর্বলতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নামবে, তবে জলবিদ্যুৎ খাতে গতি আসায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি বেড়ে হবে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। মালদ্বীপে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কারণে প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বলেন, 'গত এক দশকের একাধিক ধাক্কায় অঞ্চলটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখনই সময় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, কৃষি আধুনিকীকরণ এবং বেসরকারি খাতকে সক্রিয় করে দ্রুত কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির পথ তৈরি করার।'
প্রতিবেদনে কর ব্যবস্থায় সংস্কার, কর বিধিমালা সরলীকরণ, প্রযুক্তি ব্যবহার, কর ফাঁকি রোধ, কর অব্যাহতি কমানো এবং পরিবেশ দূষণের উপর কর আরোপের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে।