অ্যাপ ক্যাবের দৌলতে স্মার্টফোনের সাহায্যে সহজেই অনেক শহরে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যাওয়া যায়। এবার যানজট উপেক্ষা করে আকাশপথেই ট্যাক্সি চালানোর উদ্যোগ চলছে।
অনেক স্টার্টআপ কোম্পানি বিদ্যুতচালিত ট্যাক্সির কনসেপ্ট ও মডেল সৃষ্টি করছে।এমন যানের বাজারও বাড়ছে, অনেক কোম্পানি প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ টোমাস এম ফ্রিসাখার বলছেন, আমার মতে, কয়েক ডজন থেকে শুরু করে হয়তো একশোরও বেশি কোম্পানির মধ্যে কয়েকটি টিকে যাবে।
মার্কিন বিমানবাহিনী অদূর ভবিষ্যতে পরিবহণের মাধ্যম হিসেবে এয়ার ট্যাক্সি চালু করার পরিকল্পনা করছে। এশিয়ার গাড়ি কোম্পানি হিউন্ডে ও এক্সপেং-ও সেই ব্যবসায় পা রাখতে চায়। তারা ইলেকট্রিক গাড়িতে একই ধরনের ব্যাটারি ব্যবহার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক এয়ার ট্যাক্সি কোম্পানি ২০২৫ সালে নিউ ইয়র্ক শহর থেকে নেওয়ার্ক বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহণ শুরু করতে পারে। জার্মানির অটোমোবাইল ক্লাব এডিএসি আকাশপথে উদ্ধারকাজের জন্য ভোলোকপ্টার ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে।
ভোলোকপ্টার কোম্পানির কর্মকর্তা অলিভার রাইনহার্ট বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের আকাশযানের দাম হেলিকপ্টারের তুলনায় অনেক কম। ধারাবাহিক রক্ষণাবেক্ষণের খরচও কম।
আকাশপথে পরিবহণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিধিনিয়ম অত্যন্ত কড়া। কোনো আকাশযান উৎপাদন শুরুর আগে অনেক পরীক্ষায় সেটিকে পাশ করতে হয়। দুর্ঘটনার ঝুঁকি ১০০ কোটি ফ্লাইট আওয়ার্সে মাত্র এক বার। অলিভার রাইনহার্ট দাবি করেন, তাদের নিরাপত্তার বিধিনিয়মও হুবহু ইউরোপে যে-কোনো যাত্রীবাহী বিমানের মতো।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি ইউরোপের আকাশে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। এয়ার ট্যাক্সি চালানোর জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পাইলটদের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসছে। তাদের নতুন সার্টিফিকেশন ও প্রশিক্ষণ কোর্স করতে হচ্ছে।
ইএএসএ প্রধান জুসেপে স্কানাপেভো বলেন, আমরা যে সব বিধিনিয়ম প্রকাশ করেছি, তার আওতায় আমরা ধরে নিচ্ছি যে বিমান বা হেলিকপ্টরারের জন্য কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স আছে, এমন ব্যক্তি সেই যান চালাবেন। তার জন্য নির্দিষ্ট জ্ঞান, দক্ষতা ও ক্ষমতার প্রয়োজন।
ভোলোকপ্টারই প্রথম কোম্পানি হিসেবে পাইলট প্রশিক্ষণের অনুমোদন পেয়েছে। এখন তারা এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি স্থির করছে। অলিভার রাইনহার্ট বলেন, আমাদের কমার্শিয়াল লাইসেন্স পাওয়া এমন পাইলটের প্রয়োজন, যিনি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যাত্রীবাহী বিমান অথবা হেলিকপ্টার চালিয়েছেন। তাঁকে শুধু নতুন যান চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রশিক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, তুষারপাত, বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি ও উত্তাল বাতাসের মতো জরুরি পরিস্থিতিতেও পাইলটকে এয়ার ট্যাক্সি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রযুক্তিগত সমস্যা ও সিস্টেমে গোলোযোগও সামলাতে হবে। পাইলটদের জন্য টেকঅফ ও ল্যান্ডিং-ও বিশেষ স্ট্রেসের কারণ। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ টোমাস এম ফ্রিসাখার মনে করিয়ে দেন, যে পরিসংখ্যান অনুযায়ী টেকঅফ ও ল্যান্ডিং পর্যায়েই সবচেয়ে বেশি অঘটন ঘটে।
এয়ার ট্যাক্সি সত্যি বড় আকারে চালু হলে সম্পূর্ণ নতুন এয়ার রুট এবং নতুন ট্রাফিক বিধিনিয়মের প্রয়োজন হবে। ইউরোপের আকাশে নতুন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হিসেবে ইউ-স্পেস সিস্টেম কার্যকর করা হচ্ছে।
স্কানাপেভো বলেন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে আমরা কিছু নতুন নীতি তুলে ধরছি। কিন্তু ‘হাই স্পেস' প্রত্যেক সদস্য দেশের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে।
প্রশ্ন হলো, বাস্তবে গোটা বিষয়টা ঠিক কেমন হবে এবং কীভাবে কাজ করবে?
জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের বিয়াংকা শুখার্ট বলেন, উড়াল স্থির হলে ভার্টিপোর্টে এয়ার ট্যাক্সি অপেক্ষা করবে। সরাসরি সেই যানে উঠে আকাশপথে একই শহর, পাশের শহর অথবা পছন্দ অনুযায়ী অন্য কোথাও চলে যাওয়া যায়।
বাজারে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২০০টি শহরে এয়ার ট্যাক্সিব্যবহার করা হতে পারে।