২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার



বিজিএমইএ-ডিসিসিআইয়ের সঙ্গে গভর্নরের বৈঠক

পোশাক খাতের জন্য চালু হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ২৮ আগস্ট, ২০২৪, ০৬:৩৮ এএম
পোশাক খাতের জন্য চালু হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল


দেশের পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) এখনই বন্ধ না করে বিদ্যমান ৩ বিলিয়ন ডলারের ইডিএফ অব্যাহত রাখারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া এস আলম গ্রুপের যে ছয়টি ব্যাংকের ঋণপত্র (এলসি) কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে, সেটিও এক সপ্তাহের মধ্যে চালু করার আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।

ব্যবসায়ীদের এ দুটি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গতকাল পৃথকভাবে বৈঠকে বসেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সভায় ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ সময় নেতারা বলেন, এসএমই খাতে অর্থায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশকিছু স্কিম বা কর্মসূচি রয়েছে, যেগুলোর কার্যক্রম বেগবান করতে পারলে অর্থায়ন প্রক্রিয়া আরো সহজ হবে।

এর আগে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তারা তৈরি পোশাক খাতের জন্য সহজ শর্তে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ চান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গভর্নরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘সুদের হার বাড়লে বিশেষ করে এসএমই খাতে ঋণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।’ তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঋণ ও বৈদেশিক ঋণ প্রক্রিয়া সহজ করা এবং ব্যাংকগুলোয় ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর অনুরোধ করেন।

এসএমই খাতে ঋণপ্রাপ্তিতে বিদ্যমান সুদের চাপ কীভাবে আরো কমানো যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি। নীতি সুদহার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়ানো একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া; তবে এটি সাময়িক সময়ের জন্য প্রযোজ্য বলে আমরা মনে করি।’

আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত থাকুক, এটা আমাদেরও প্রত্যাশা। কারণ মূল্যস্ফীতির ফলে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ব্যাংকের মন্দ ঋণের পরিমাণ কমানো সম্ভব হলে নীতি সুদহারও হ্রাস পাবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এটিকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘এসএমই খাতের বিকাশের লক্ষ্যে সুদের হার বৃদ্ধির চাপ মোকাবেলায় ও ঋণের প্রবাহ বজায় রাখতে সহায়তা প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হলে নীতি সুদহার ও ব্যাংক ঋণের সুদহারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হবে। ব্যাংকের আমানত সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে (দুই অংক) তোলা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।’

গভর্নর এসএমই খাতের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধাগুলো আরো সচল করার ওপর জোর দেন। পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে সরকারি ঋণগ্রহণের পরিমাণ সীমিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া ট্রেড ক্রেডিট বা বাণিজ্যিক ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের পেমেন্ট হিস্ট্রি বা অর্থ পরিশোধের ইতিহাস পর্যালোচনা এবং তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান গভর্নর।

আহসান এইচ মনসুর জানান, শিগগিরই একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে, যার ভিত্তিতে আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনয়নে প্রয়োজনীয় রোডম্যাপ তথা পথনকশা প্রণীত হবে। এছাড়া নতুন বিনিয়োগকারীদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে বিজিএমইএ নেতারা জানান, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ছয়টি ব্যাংকের এলসি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব ব্যাংকের এলসি কার্যক্রম পুনরায় সচল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে এসব ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন হয়ে যাবে। এরপর এলসি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। ব্যবসায়ীদের আরো কয়েক দিন ধৈর্য ধরতে হবে।’

এ সময় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে রফতানি উন্নয়ন তহবিল এখনই বন্ধ না করে বিদ্যমান ৩ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড চালু রাখার আবেদন করা হয়। গভর্নর বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন। এরপর বিজিএমইএর পক্ষ থেকে তৃতীয় একটি দাবি তুলে ধরা হয়। তারা জানান, দুই মাস ধরে দেশে চলমান অস্থিরতায় পোশাক খাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রফতানি সচল রাখতে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল (সফট লোন) গঠন করা প্রয়োজন। এক বছরের মধ্যে সুদসহ এ অর্থ ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন ব্যবসায়ী নেতারা। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

বৈঠক শেষে বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ হাজার কোটি টাকার একটি সফট লোন প্যাকেজ চালু করতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া ইডিএফ কার্যক্রম চালু থাকবে। ছয় ব্যাংকের এলসি সমস্যাও দ্রুত সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন গভর্নর।’



আরো পড়ুন