সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস জরুরী। অনেক সময় খাদ্যতালিকার বিভিন্ন খাবার থেকেই ক্যানস্যারের মতো রোগে ভুগতে পারেন। যেমন অ্যাসপার্টেম নামের সুইটেনার বা কৃত্রিম চিনি খাওয়া। বিভিন্ন রকমের খাদ্যদ্রব্য ও ফিজি ড্রিঙ্কের মতো কোমল পানীয়তে কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করা হয়। এই কৃত্রিম চিনি ক্যানসারের কারণ বলেন অনেকেই। বিবিসির এক প্রতিবেদন এ বিষয়ে বিস্তারিত উঠে এসেছে।
কৃত্রিম চিনি যখন ক্যানসারের কারণ: অতিরিক্ত মাত্রায় কৃত্রিম চিনি খেলে মানুষের দেহে ক্যানসার হতে পাররে বলে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন। একারণে দিনে সর্বোচ্চ কতোটুকু অ্যাসপার্টেম গ্রহণ করা যেতে পারে সেবিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য গবেষকদের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের দুটো গ্রুপ এসংক্রান্ত হাজার হাজার বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখছেন। ইতোমধ্যেই তারা ঘোষণা করেছেন যে এটি হয়তো ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। তারা বলছেন, কতো মাত্রায় অ্যাসপার্টেম গ্রহণ করলে ক্যান্সার হতে পারে তা নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রায়শই ভীতি ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
বেশিরভাগ মানুষই যতটুকু মাত্রায় খাওয়া নিরাপদ, তার চেয়ে কম পরিমাণে অ্যাসপার্টেম সুইটেনার গ্রহণ করে থাকে। তবে যারা বেশি মাত্রায় এই কৃত্রিম চিনি গ্রহণ করেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদেরকে এর পরিমাণ কমিয়ে আনার সুপারিশ করছে।
যেসব খাবারে কৃত্রিম চিনি থাকে: চিনিমুক্ত খাবার ও ডায়েট পানীয়তে এই অ্যাসপার্টেম ব্যবহার করা হয়। কারণ এই রাসায়নিক পদার্থটি চিনির চেয়েও ২০০ গুণ বেশি মিষ্টি। ডায়েট কোক, কোক জিরো, পেপসি ম্যাক্স এবং সেভেন আপ ফ্রির মতো বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডে এই কৃত্রিম চিনি অ্যাসপার্টেম ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও আরো প্রায় ছয় হাজারের মতো পণ্যে এই রাসায়নিক পদার্থটি ব্যবহার করা হয় যার মধ্যে রয়েছে টুথপেস্ট ও চুইং গাম থেকে শুরু করে দই পর্যন্ত।
চিনি নাকি সুইটনার: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ড. ফ্রান্সেসকো চিনি না কি সুইটেনার কোনটা স্বাস্থ্যকর সে বিষয়েও কথা বলেছেন। এই প্রশ্নের জবাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, চিনিযুক্ত কোলা না কি সুইটেনার দেয়া কোলা – কোনটা ভালো এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে, আমি মনে করি সেখানে একটা তৃতীয় অপশন থাকা উচিত। এসবের পরিবর্তে আমি পানি পান করতে বলবো যাতে সবমিলিয়ে মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়।
তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এখনও পর্যন্ত যেসব পর্যালোচনা হয়েছে তাতে অ্যাসপার্টেম যে স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয় সেবিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, যারা মাঝে মধ্যে সুইটেনার দেয়া পানীয় বা খাদ্য গ্রহণ করেন তাদের এবিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই, কিন্তু যারা বেশি পরিমাণে গ্রহণ করেন সমস্যাটা তাদের।
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের যে দলটি তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ কর দেখছে সেটি হচ্ছে: ক্যান্সার গবেষণা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার বা আইএআরসি। এই সংস্থাটি ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চারটি শ্রেণির কথা উল্লেখ করেছে। যার মধ্যে অ্যাসপার্টেম ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বলা হয়েছে কৃত্রিম চিনিকে। মূলত তিনটি গবেষণার ফলাফল থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা গেছে যেখানে এসবের সঙ্গে এক ধরনের লিভার ক্যান্সারের সম্ভাব্য যোগসূত্র পাওয়া গেছে।