২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



যে কারণে ভরা মৌসুমেও কক্সবাজারে পর্যটক কম

তাফহীমুল আনাম, কক্সবাজার || ২৪ নভেম্বর, ২০২৩, ০২:১১ পিএম
যে কারণে ভরা মৌসুমেও কক্সবাজারে পর্যটক কম


সম্প্রতি দেশে ট্রেন ও বাসে আগুন দেওয়ায় পর্যটন খাতে ভাটা পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার কারণে অনেক পর্যটক নির্ধারিত ভ্রমণ বাতিল করছেন।  তাই শীতের মৌসুমে হোটেল-কটেজ বুকিং দিতে যেখানে ১ মাস অপেক্ষা করতে হতো, সেখানে পর্যটকশূন্য হয়ে পেড়েছে কক্সবাজারের প্রতিটি স্পট।   

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘করোনার ব্যবসায়িক ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই হরতাল-অবরোধের কারণে এই খাতের মরণদশা। মানুষ ঘুরতে যায় আনন্দ করতে, কেউই চাইবে না কোনো ধরনের আতঙ্কের মধ্যে থাকতে। ফলে যেসব পর্যটন কেন্দ্রে মানুষ সবচেয়ে বেশি ঘুরতে যায়, সেসব পর্যটন কেন্দ্র এখন একেবারেই খালি। বিমানে কিছু পর্যটক আসা-যাওয়া করলেও তা উল্লেখ করার মতো নয়।’

তোফায়েল আহমদ বলেন,‘হরতাল-অবরোধের কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে। কারণ, নভেম্বর প্রায় শেষ, ডিসেম্বরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে এমন লক্ষণ আমরা দেখছি না। জানুয়ারিতে নির্বাচন। ফলে মৌসুমের চার মাসের মধ্যে তিন মাস কোনো ব্যবসা হবে না। আর ফেব্রুয়ারিতে ব্যবসা করে খরচও ওঠানো যাবে না। কারণ, সারা বছরের ব্যবসা হয় এই চার মাসে ‘ 

ঢাকার মালিবাগের বাসিন্দা ব্যবসায়ী নসরুল হামিদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান,‘গত ৪ ও ৫ নভেম্বর সপরিবারে কক্সবাজার যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এজন্য তিনি কক্সবাজারের একটি পাঁচতারকা হোটেলে তিনটি রুম বুকিং করেন। পরে অবরোধের কারণে কক্সবাজারে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন। পরে সপরিবারে চলে যান  নেপাল।’

বান্দরবনের একটি অভিজাত হোটেলের মালিক কিশলুর রহমান বলেন, ‘ দেশের আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, বান্দরবন, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলসহ প্রায় সবকটিই এখন পর্যটকশূন্য। নভেম্বরে মাত্র দুজন পর্যটক আমাদের রিসোর্টে তিন দিন ছিলেন। এ ছাড়া আর কোনো পর্যটক আসেননি। প্রায় ৩০ জন পর্যটক বিভিন্ন সময় রুম বুকিং দিয়েছিলেন। হরতাল-অবরোধের কারণে সব বুকিংই বাতিল হয়েছে।’

কক্সবাজারের তিন তারকা হোটেলের ম্যানেজার শামীম হাসান বলেন,‘অবরোধ-হরতালের কারণে কক্সবাজার পর্যটকশূন্য। বিমানে কিছু পর্যটক আসছেন, তাও একেবারে নগণ্য। হোটেলের রুম ভাড়াসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার পরও পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি অনেকে আগে থেকে ডিসেম্বরের জন্য রুম বুকিং দিলেও এখন তা বাতিল করছেন। বর্তমানে মাত্র ১০ শতাংশ রুম ভাড়া দেওয়া যাচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে অন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।’

কক্সবাজার হোটেল গ্র্যান্ড সেন্ডির মালিক আবদুর রহমান বলেন,‘পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের আনাগোনা নেই।বান্দরবনের পূরবী হোটেলের ম্যানেজার শিমুল দত্ত বলেন, পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি, নীলদিগন্ত, শৈলপ্রপাতসহ দর্শনীয় স্থানগুলো সবই ফাঁকা।’

বান্দবানের টুরিস্ট গাড়ি শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন ফোন কলে বলেন, ‘তিন শতাধিক টুরিস্ট গাড়ির পাঁচ শতাধিক শ্রমিক রয়েছেন। তারা পর্যটকের ওপর নির্ভরশীল। অবরোধে পর্যটক না আসায় চালক শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে ঠিকমতো খেতে পর্যন্ত পারছেন না। বান্দরবনে দীর্ঘদিন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ পাহাড়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় পর্যটনশিল্প মুখথুবড়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে না হতেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটকদের আনাগোনা আবার থমকে গেছে।’

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাষ্টিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘কক্সবাজারের হোটেল মোটেল ও বিপণী বিতানসহ পর্যটন সেক্টরে গত দুই মাস ধরে দৈনিক ১৫/১৬ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১ হাজার ৪০০ পর্যটন স্থান রয়েছে। এর মধ্যে ২৮১টি স্থানে পর্যটকরা নিয়মিত যান। প্রতিবছর এসব পর্যটন কেন্দ্রে প্রায় দুই কোটি দেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন।

পর্যটক আকর্ষণ বাড়াতে ও রাতের বিনোদনের জন্য মাত্র ক'দিন আগে কক্সবাজারে মাসব্যাপী শুরু হয়েছে শিল্প ও বাণিজ্যমেলা। সেখানে নেই কোনো কোলাহল। আর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রতিটি পয়েন্ট এখন শোনশান নীরব।বন্ধ হয়ে গেছে কক্সবাজার শহরের আড়াইশ রেস্তোরাঁ। হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে প্রতিদিন ছাঁটাই করা হচ্ছে কর্মচারী।

ঢাকা বিজনেস/এমএ/



আরো পড়ুন