ত্রাণ সরবরাহের জন্য গাজায় অস্থায়ী ভাসমান সমুদ্রবন্দর তৈরি করেছিল মার্কিন সেনাবাহিনী। সাগরের ঢেউ ও জোর বাতাসে তা ভেঙে পড়েছে। সেটি মেরামত করতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছে মার্কিন কর্মকর্তারা। সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র ও ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিং বিবিসিকে বলেছেন, ইসরায়েলের নৌবাহিনীর সহায়তায় আগামী ২ দিনের মধ্যে অস্থায়ী বন্দরের ভাসমান অংশগুলো সরানো হবে; তারপর সেগুলো মেরামত করে ফের স্থাপন করা হবে বন্দর। এতে এক সপ্তাহ বা আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আবহাওয়ার ওপর তো আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সাগর শান্ত এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকে, তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যেই বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হবে। কিন্তু আবহাওয়া যদি প্রতিকূল থাকে, সেক্ষেত্রে কাজ শেষ হতে আরও সময় লাগবে।’
গাজার উত্তর ও পশ্চিমে ইসরায়েল সীমান্ত, দক্ষিণে মিসর সীমান্ত এবং পূর্বদিকে ভূমধ্যসাগর অবস্থিত। ২০০৫ সালে হামাস ক্ষমতা দখলের পর থেকে উপত্যকার উত্তর ও পশ্চিম সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। তখন থেকে উপত্যকায় খাদ্য-ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার সরবরাহ উপত্যকায় যেতো দক্ষিণের মিসরীয় সীমান্ত রাফা ক্রসিং দিয়ে। তবে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর সেই সীমান্তপথটিও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এই পরিস্থিতিতে গত ৮ মার্চ গাজায় পূর্বদিকে ভূমধ্যসগারের তীরে অস্থায়ী সমুদ্রবন্দর তৈরির ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঘোষণায় তিনি বলেন, প্রস্তাবিত এই বন্দরটি শুধুমাত্র গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ পাঠানোর জন্য ব্যবহার করা হবে। বাইডেনের ঘোষণার দেড় মাস পর, গত ২৬ এপ্রিল থেকে গাজার সমুদ্রতীরে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে তার ওপর ভাসমান বন্দর নির্মাণ শুরু করে মার্কিন নৌবাহিনী। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হলে ১৭ মে সেই বন্দরে নোঙ্গর করে প্রথম ত্রাণবাহী মার্কিন জাহাজ।
৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের অস্থায়ী ওই বাঁধটি তৈরি করা হয়েছে ইস্পাতের টুকরো জোড়া দিয়ে। মূলত সাগরের ঢেউয়ের কারণে ইস্পাতের বেশ কয়েকটি জোড়া আলগা হয়ে যাওয়ায় ঘটেছে এই বিপত্তি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি এবং গাজায় অস্থায়ী বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফগবো’র অন্যতম অংশীদার মাইক মুলরয় এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, ‘গাজায় বন্দর ফের নির্মাণের ক্ষেত্রে আবহাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ, এছাড়া অন্যান্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে; কিন্তু এসব বাধা-চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা সম্ভব এবং এই মিশন চালিয়ে যাওয়ার জন্যই এগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। কারণ, ত্রাণের অভাবে গাজার ফিলিস্তিনিরা এখন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।’