এবার ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই অমর একুশে বইমেলা শুরু হচ্ছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই উপলক্ষে চলছে ব্যস্ত সময়। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রস্ততির কাজ শেষ হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারির বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত হয়ে মেলা উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
উদ্বোধনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা।।
এদিকে, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে মেলার প্রস্তুতি কাজ সরেজমিন দেখার জন্য মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন।
এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘পড় বই গড় দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।
বাংলা একাডেমির প্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক এবং অমর একুশে বইমেলার সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে অমর একুশে বইমেলার জন্য প্রত্যেক সেক্টর থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবারও একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদাকে সভাপতি করে ৩১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি নানা বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
এবার বইমেলায় কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন হয়েছে। মেলার পুরো বিন্যাসই পরিবর্তন করা হয়েছে। মেলায় মূল মঞ্চ থাকবে বাংলা একাডেমি অংশে। আর ‘গ্রন্থ উন্মোচন’ ও ‘লেখক বলছি মঞ্চ’ থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে। বেশি স্টল ও প্যাভেলিয়ন থাকছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
অন্যদিকে, মেট্রারেলের কারণে বিগত সময়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট সংলগ্ন যে ১৮২টি স্টল ও ১১ টা প্যাভেলিয়ন ছিল, সেগুলো এবার সরিয়ে এনে সোহরাওয়ার্দীর মূল কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে। আর সেই স্থানে ফুডকোর্টসহ নানা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আগে যেখানে মেলার প্রধান প্রবেশ পথ ছিল তা পরিবর্তন করা হয়েছে। আগের সেই প্রবেশপথ এবার প্রস্থানের জন্য রাখা হয়েছে। মূল প্রবেশদ্বার রাখা হয়েছে বাংলা একাডেমির উল্টো দিকে। মন্দিরের প্রবেশদ্বার দিয়ে আগতরা মেলায় প্রবেশ করবেন। এবার মেলায় আগতদের জন্য নির্দিষ্ট স্টল খুঁজে পেতে ডিজিটাল বোর্ডসহ প্ল্যাকার্ড রাখা হয়েছে। সেখানে ম্যাপ থাকবে এবং বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে অমর একুশে বইমেলা সংক্রান্ত নীতিমালা একাডেমির ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এবারের মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোট ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকছে। এরমধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান, শিশু চত্বর ৬৯টি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাভেলিয়ন আছে ৩৪ টি। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভেলিয়ন আছে ১৪৭ টি। সবমিলিয়ে ৫৭৩ প্রতিষ্ঠান এবং সর্বমোট ৭০৪ টি (প্যাভেলিয়ন বাদে) স্টল থাকছে। এছাড়া ফুডকোর্ট, নামাজের জায়গা, ওয়াশরুম পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বইমেলার চারপাশে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়োজিত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের নিরাপত্তা ব্যুহ।
মূল গেট থেকে ঢুকেই শিশু চত্বর পাওয়া যাবে। সেখানে সিসিমপুরসহ শিশুদের আনন্দ ও বিনোদনের জন্য নানা আয়োজন থাকবে। মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা বিকাল ৩টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত বইমেলা চলবে। ৯টায় আলো নিভিয়ে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সংক্রমণের বিধিনিষেধের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতাকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২১ সালে মেলা শুরু হয় মার্চে। পরের বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হয়। ২০২০ সালে একদিন পিছিয়ে মেলা শুরু হয়েছিল। প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ভোট থাকায় তা একদিন পিছিয়ে শুরু হয়েছিল।ৎ
এবারের বইমেলার শেষে ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণগত মানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থের মধ্য থেকে দেওয়া হবে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’। এছাড়া প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য দেওয়া হবে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’। প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচার করে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে। এর বাইরে ২০২৩ সালে অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। সূত্র: বাসস
ঢাকা বিজনেস/এনই/