২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



রমজানে কাজ মিলছে না দিনমজুরের

তানভীর আহমেদ, সুনামগঞ্জ || ২০ মার্চ, ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
রমজানে কাজ মিলছে না দিনমজুরের


ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাতটা। সূর্যের আলো সেভাবে ফোটেনি। কিন্তু তাতে কী! ঝড় কিংবা বৃষ্টি যা-ই থাকুক, তা মাথায় নিয়ে শ্রম বিক্রি করতে প্রতিদিন ভোরে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কালীবাড়ি পয়েন্টে হাজির হন  শ্রমজীবী মানুষেরা। এই সময় বিকিকিনি চলে কেবল মানুষের শ্রম।

শ্রমজীবী মানুষরা শহরের আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বসে থাকেন শ্রম বিক্রির আশায়। ভাগ্য ভালো থাকলে কোনো ক্রেতা এসে দরদাম করে কিনে নিয়ে যান। পবিত্র রমজান মাস চলমান থাকায় অনেক সময় ক্রেতা না পেয়ে খালি হাতেই ফিরে যেতে হয় ঘরে। বিভিন্ন বয়সী শুধু পুরুষ নন, নারীরাও ঠিক এভাবে নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকেন এই পয়েন্টে। 

বুধবার (২০ মার্চ) সকালে সরেজমিনে গেখা গেছে, মাত্র ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে আস্ত একজন জলজ্যান্ত মানুষ। পছন্দমতো বেছে নেওয়া যাবে নারী কিংবা পুরুষ। আধুনিক যুগে এমন কথা অবাস্তব মনে হলেও সুনামগঞ্জের কালীবাড়ি পয়েন্ট এলাকায় প্রতিনিয়ত সরাসরি মানুষ নন, বিক্রি হয় মূলত তাদের শ্রম। ক্রেতারা এসে দর কষাকষি করে এসব মানুষকে কাজ করানোর জন্য নিয়ে যান কর্মক্ষেত্রে। 

হাটে ক্রেতার আশায় দাঁড়িয়ে থাকা অঞ্জন দাস বলেন, ‘সকাল হওয়ার সাথে সাথেই এইখানে আসি, কোনো দিন কাজ মেলে। কোনো দিন  মেলে না। তাছাড়া এখন রমজান মাস চলছে। কাজের পরিমাণ অনেক কম। কোনো দিন ৩৫০ টাকায় আবার কোনো দিন ৪০০ টাকায় সারাদিন কাজ করতে হয়। এই টাকায় কি সংসার চলে? পরিবারে ৫জন মানুষ আছে, দিনদিন এদের ভরণপোষণ করা কষ্টকর হচ্ছে।’ 

অঞ্জন দাস  অভিযোগের সুরে বলেন, ‘বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আমাদের মতো দিনমজুরদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে জিনিসপত্রের দাম।  অনেকসময় পানি দিয়া ভাত খাওয়া লাগে, মাছ-মাংস কিনা  খাওয়া আমাগোর জন্য বিলাসিতা। গরিবের কষ্টের খুঁজ কেউ রাখে না।’ 

সকাল থেকে কাজের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা রোজিনা বেগম বলেন, ‘অভাবের সংসার, কাজ না করলে খাওন  পাইতাম কই থাকি? তাই আমরা প্রতিদিনই কাজ করি। মূলত বাধ্য হয়েই কাজ করতে হয়। না করলে পেট চলবে কী করে? ভীষণ কষ্ট হয়! তারপর আবার মহিলাদের দাম নাই, পুরুষের থেকে ১০০-১৫০০ টাকা কমে কাজ করা লাগে। আবার অনেকসময় কাজ না পাইলে খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয়।’

দীর্ঘদিন যাবৎ এই পেশায় জড়িত রয়েছেন আব্দুস শহীদ মিয়া। পরিবারে ২ ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছেন।  তিনি তার কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘ফজরের আজান দেওয়ার সাথে সাথে ঘুম ভেঙে যায়। তার পর হাতমুখ ধুয়ে আস্তে আস্তে ওয়েজখালি থেকে হেটে হেটে এইখানে আসি। কাজ করার জন্য নিয়মিত আসতে হয়। অনেকসদেখা যায় মানুষ বেশি হইগেলে দাম কমি যায়। অনেকসময় ২৫০-৩০০ টাকায়ও কাজে যেতে হয়। আবার অনেক সময় কাজ মেলে না। আবার দেখা যায় এক কাজের কথা বলে নিয়ে গিয়ে অন্য কাজ করায়। খুব কষ্টে আছি আমরা।’ 

ঢাকা বিজনেস/এনই 




আরো পড়ুন