শীত এসে গেছে। তবু রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন শপিংমল,মার্কেট ও ফুটপাতে শীতবস্ত্র বেচাবিক্রি জমে ওঠেনি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট, হযরত শাহ্ আলী শপিং কমপ্লেক্স, গুলিস্তানের পীর-ইয়ামিনি মার্কেট , ঢাকা নিউমার্কেট ও পান্থপথের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গ কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শপিংমলগুলোতে বিভিন্ন রঙ-বেরঙের ছোট-বড় সোয়েটার, কোর্ট, জ্যাকেটসহ নানারকম শীতবস্ত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে। দিনের অর্ধেক সময় পার হয়ে গেলেও কেউ কেউ দুটি বা একটি শীতবস্ত্র বিক্রি করতে পেরেছেন। আবার কেউ কেউ একটিও বিক্রি করতে পারেননি। মোবাইলে গেম খেলে অথবা একে-অন্যের সঙ্গে খোশগল্পে সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বায়তুল মোকারমে ক্রেতা সমাগম থাকলেও বিক্রির পরিমাণ কম। একই অবস্থা ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতেও।
রাজধানীর পীর-ইয়ামিনি মার্কেটে শীতবস্ত্র কিনতে এসেছে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন,‘আমার আয় অনেক কমে গেছে। নাজিরা বাজারে আমার সবজির দোকান রয়েছে। বেচাকেনা অনেক কম। আমার পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠাবো। যে-কারণে তাদের শীতের কাপড় কিনে দেওয়ার জন্য মার্কেটে এসেছি। খুব কষ্ট করে বাচ্চা দুটোকে শীতবস্ত্র কিনে দিলাম। টাকা বেশি থাকলে আরও শীতবস্ত্র কিনতাম।’
রাজধানীর পান্থপথের কাপড় বিক্রেতা জসিম ঢাকা বিজনেসকে বলেন,‘গত বছরের মতো এবার শীতে বেচাকেনা তেমন নেই। সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় প্রয়োজন ছাড়া নতুন পেশাক কিনছেন না কেউ। আগে একেক জন ছাত্র, চাকরিজীবী ২-৩ টা করে মোটা গেঞ্জি কিনতেন। এখন একটা কিনতে এসেই দামাদামি করছেন। ৫০০ টাকা দিয়ে ২টি গেঞ্জি কিনছেন না কেউ।’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রানা বলেন, ‘সেমিস্টার ফাইনাল শেষের দিকে এর পর বাসায় যাবো। ঢাকায় শীত কম থাকলেও দিনাজপুরে অনেক শীত। কিছু কেনাকাটা করতে বের হয়েছি কিন্তু দামে মিলছেনা। যে জ্যাকেটগুলো গত বছর ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি কী করবো।’
পীর-ইয়ামিনি মার্কেটের অর্নভ ফ্যাশন-এর বিক্রেতা মামুন খান ঢাকা বিজনেসকে বলেন,‘করোনার সময়ও বর্তমানের চেয়ে বেশি শীতবস্ত্র বেচাকেনা হয়েছে। হোলসেল ও খুচরা দুটো বিক্রিই কমে গেছে আমাদের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে আসেন শীতবস্ত্র কেনার জন্য। এবার তাদের আসার সংখ্যাও অনেক কমে গেছে। আমার ১০ টা দোকান ছিল। তারমধ্যে চালাতে না পারায় ৬টি দোকান বিক্রি করে দিয়েছি। দোকানের মালিকের কাছে প্রতি মাসে ভাড়া দিতে ঠিকভাবে না পারায় লজ্জিত থাকি। অনেকে ব্যবসা করতে যেয়ে অনেক ঋণ হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ পালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আছি।’
মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের নোরা ফ্যাশন অ্যান্ড বেবি কেয়ার-এর স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল খান বলেন, ‘এখন বাজে দুপুর সোয়া তিনটা। এখন পর্যন্ত একটা কাপড়ও বিক্রি করতে পারিনি। ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ।’
হযরত শাহ্ আলী শপিং কমপ্লেক্স-এর ঈশিকা ফ্যাশন অ্যান্ড বেবি কেয়ার-এর বিক্রয়কর্মী কাশেম ঢাকা বিজনেসকে বলেন,‘মাসের শুরুর দিকে কিছুটা শীত পড়ায় মানুষ তখন কিছু কাপড় কিনেছে। এখন শীত অনেক কমে গেছে,যে কারণে মানুষ আর শীতের কাপড় খুব একটা কিনছেন না। তাছাড়া বর্তমানে অর্থনৈতিক খারাপ পরিস্থিতিতে মানুষ খাবে না পড়বে?’
ঢাকা বিজনেস/এমএ/