বাংলা চলচ্চিত্রের ধ্রুবনক্ষত্র চিত্রনায়ক, প্রযোজক, পরিচালক ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্মদিন আজ। ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি হওয়ার পর আজই তার প্রথম জন্মদিন। ১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর, আজকের এই দিনে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম হাজি আব্দুল আলী, মায়ের নাম সরুফা খাতুন।
বয়স্ক মানুষ থেকে শুরু করে নতুন প্রজন্মের কাছে সমান জনপ্রিয় তিনি। কারও কাছে স্বপ্নের নায়ক, কারও কাছে জনপ্রিয় হয়েছেন রাজপথের নায়ক হয়ে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে মানুষের সঙ্গে তিনি আরো মিশে আছেন।
সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘বসুন্ধরা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ইলিয়াস কাঞ্চনের। ১৯৭৭ সালের ২৬ মার্চ তিনি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। সে বছরই ৩১ ডিসেম্বর ‘বসুন্ধরা’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন ববিতা। সেই থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই তার অভিনীত চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। সেই হিসেবে ৩৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন।
নায়িকা হিসেবে কাঞ্চন তার বিপরীতে সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন চম্পা, দিতি ও অঞ্জু ঘোষকে। ইলিয়াস কাঞ্চন যৌথভাবে প্রথম প্রযোজনা করেন ‘সর্পরানী’ ও ‘বোনের মতো বোন’ চলচ্চিত্র। এরপর তিনি এককভাবে প্রযোজনা করেন ‘বাদশা ভাই’, ক্যারিয়ারের ১০০তম চলচ্চিত্র ‘মাটির কসম’, ‘খুনী আসামী’,‘ বদসূরত’, ‘বাঁচার লড়াই’,‘ মুন্না মাস্তান’ ইত্যাদি। ইলিয়াস কাঞ্চন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে পরিণত করে ২২ অক্টোবরকে ‘জাতীয় নিরাপদ দিবস’-এর যাত্রা শুরু করান ২০১৮ সালে।
অভিনয় জীবনের পথচলায় বাবুরাজ পরিচালিত ‘পাষাণ’ চলচ্চিত্রে তিনি এবং অঞ্জু ঘোষ প্লে-ব্যাকও করেছিলেন। ইলিয়াস কাঞ্চন দুটি চলচ্চিত্র নির্দেশনা দিয়েছেন, একটি ‘বাবা আমার বাবা’ এবং অন্যটি ‘মায়ের স্বপ্ন’। আলমগীর কবির পরিচালিত ‘পরীণিতা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘জন্মদিন উদযাপন বা এই দিনে কেক কাটি না আমি। আর জন্মদিনকে বিশেষভাবে উদযাপন করতে হবে এমন কোনো কথাও নেই। হ্যাঁ, আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে আমি এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলাম। তিনি আমাকে সুন্দর জীবন উপহার দিয়েছেন। আমি আমার মেধা শ্রম কষ্ট দিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছি। সবই আল্লাহর অশেষ রহমত। যথারীতি আজ একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করব। এরপর আমি সমিতিতে যাব। এখন সেখানে যদি কেউ কেক নিয়ে এসে কেক কাটে, আমার তো বলার কিছু থাকে না। তো আমি আসলে সবার কাছে দোয়া চাই, ভালোবাসা চাই।’
ইলিয়াস সামাজিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন। ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে এ দিনটিকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তার স্ত্রীর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হবার পর ১৯৯৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে "নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ জীবন" শ্লোগানে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন তার প্রতিষ্ঠিত নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। নিসচা আন্দোলন বাংলাদেশে ব্যাপক ভাবে পরিচিতি লাভ করে এবং এর সাথে বিভিন্ন মহল একাত্মতা ঘোষণা করেছে। তিনি বর্তমানে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও প্রধান কান্ডারী।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এবার যোগ দিয়েছেন ভিসতা ইলেকট্রনিকসে। তিনি উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে ভিসতায় রয়েছেন। ভিসতা পরিবারের পক্ষ থেকে এই গুণী মানুষের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিজনেস/এম