১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার



এই শীতে চলো যাই পঞ্চগড়

শুভঙ্কর মেঘ || ০৮ নভেম্বর, ২০২৩, ০২:৪১ পিএম
এই শীতে চলো যাই  পঞ্চগড় পঞ্চগড়ের মির্জাপুর শাহী মসজিদ


হেমন্তের নবান্নের দেশে এখন শীত আসি আসি ভাব নিয়ে আছে প্রকৃতি। এই বুঝি শীত এলো। বিগত কয়েক বছর শীত এসেছে খানিকটা দেরিতে। অথচ এবার শীতের আগমনী বার্তা যেন একটু বেশিই দ্রুত হয়ে গেছে। শীত এলেই অনেকের মাথায় ভ্রমণের চিন্তা ভর করে। কিন্তু শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে কোথায় গেলে বেশি ভালো হয়? ভালো হয় উত্তরবঙ্গে গেলে। দেশের ভেতরেই উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার অপরূপ সৌন্দর্য আপনার মনে গভীর ছাপ ফেলবে। আর প্রচণ্ড শীতের ছাপ পড়বে আপনার হাড়ে। কিন্তু গেলে উত্তরবঙ্গের কোথায় যাবেন? একটি সহজ উত্তর; পঞ্চগড়। পঞ্চগড়ে যাওয়ার মূল আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘা। শীতের মেঘমুক্ত আকাশে রোদ উঠলে চাকচিক্যটা টের পাওয়া যায়। এই সময়টিতেই মূলত শীতের আনন্দ উপভোগ করা যায়। দেখা যায় দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। দূরে হলেও কত কাছে লাগে। সাধারণত সকাল সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার।

কাঞ্চনজঙ্ঘা বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। ভারতের সিকিম ও নেপাল সীমান্তে এর চূড়া অবস্থিত। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে পর্বতটি। শীতের শুরুর দিকে যখন আকাশ মেঘ এবং কুয়াশামুক্ত থাকে তখন ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে খালি চোখেই এই পর্বতশৃঙ্গের অপরূপ রূপ দেখা যায়। পঞ্চগড়েই সচরাচর ভ্রমনপিপাসুরা যান। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধায় গেলে ভিউ হয় দারুণ।  প্রতিবছর শীতের শুরুতে প্রায় সব বয়সের মানুষ কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপের সৌন্দর্য উপভোগে ভিড় জমান উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। বিস্তীর্ণ চা-বাগানের সবুজ গালিচার মধ্যে সোনার আলোয় উদ্ভাসিত হয় এর নৈসর্গিক রূপ। 

মহারাজার দিঘি

বাস ও ট্রেন; ঢাকা থেকে কেবল এই দুই মাধ্যমে পৌঁছানো যায় পঞ্চগড় জেলায়। ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে পঞ্চগড়ের বাস পাওয়া যায়। টিকিটের দাম খুব বেশি নয়। তবে জার্নিটা হয় দীর্ঘ। পঞ্চগড় নেমে লোকাল বাসে করে যেতে হবে তেঁতুলিয়ায়। কোনো নির্দিষ্ট সময় নিয়ে অত ভাবতে হবে না। কারণ সারাদিনই বাস চলাচল করে। আপনি পঞ্চগড়ে নেমে কিছুক্ষণ বাতাস পরখ করে নিন। তারপর বাসের দিকে এগিয়ে যান। পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়া যাওয়ার পথে এশিয়ান হাইওয়ে পড়ে। ভাগ্য ভালো হলে এ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় দূরের আকাশে চোখে পড়তে পারে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য। প্রথমেই তাই প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। 

ট্রেনে যেতে হলে ঢাকার কমলাপুর থেকে সরাসরি পঞ্চগড় ট্রেন আছে। পঞ্চগড় নেমে এখানকার কেন্দ্রীয় বাসস্টেশন ও চৌরঙ্গী মোড়ে পাওয়া যাবে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস। 

পঞ্চগড়ে এসে শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘাই দেখবেন তা কিন্তু নয়। সদরের প্রাণকেন্দ্রে একটি ঐতিহাসিক ডাকবাংলো রয়েছে। কথিত আছে– এটি নির্মাণ করেছিলেন কুচবিহারের রাজা। জেলা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত ডাকবাংলোটির পাশে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে সুন্দর একটি পিকনিক স্পট। দুটি স্থাপনা একসাথে দারুণ এক দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। সৌন্দর্যমণ্ডিত এ জায়গাটি দেখার জন্য ভূমি থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচুতে উঠতে হবে। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে স্রোতস্বিনী মহানন্দা। নদীর ওপারে ভারত আর এপারে সুউচ্চ গড়ের ওপর এই ডাকবাংলো ও পিকনিক স্পটটি। এই ডাকবাংলোর বারান্দা থেকেই দেখা যায় দূরের দিগন্তরেখায় ভেসে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। এ ছাড়া তেঁতুলিয়ার অন্যান্য জায়গার মধ্যে বাংলাবান্ধা, বাইপাস, ভজনপুর করতোয়া সেতু, ভিতরগড় থেকেও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। পঞ্চগড়ের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান সমূহ হলো-মহারাজার দিঘী, রকস মিউজিয়াম,  তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো, ভিতরগড়, মিরগড় করতোয়া নদী, মহারাণী বাঁধসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে পঞ্চগড় জেলায়।  

পঞ্চগড় থেকে দেখা কাঞ্চনজঙ্ঘা

তেতুলিয়া উপজেলায় আবাসিক হোটেল রয়েছে। মহানন্দা নদীর তীরের ডাকবাংলোতে থাকা যেতে পারে। তবে তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট থেকে অনুমতি নিতে হবে। ঘুরে আসতে পারেন বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের জেলা পরিষদের ডাকবাংলো এবং বন বিভাগের রেস্টহাউসে। এসব জায়গাতেও থাকার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হবে। পঞ্চগড়ের বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে, যেগুলো এখনো গ্রামগুলোতে রান্না হয়ে থাকে। অবশ্য এগুলোর অধিকাংশই এখন বিলুপ্তির পথে। খাবারগুলোর মধ্যে ডিম ভূনা, তেঁতুলিয়া উপজেলায় হালকা, শীদলের ভর্তা, পাটা শাকের খাটা, কাউনের ভাত, সজির মুড়ার ছ্যাকা ও মোড়ত লাভা শাকের পেলকা অন্যতম। অর্থাৎ ভোজনরসিকরাও এখানে এসে হতাশ হবেন না। শীতের সময় অন্য এক আমেজ নিয়েই পঞ্চগড়ে ঘুরে আসুন। নিশ্চিত থাকুন। আপনি হতাশ হবেন না।



আরো পড়ুন