দেশে ২০০ প্রেক্ষাগৃহে একযোগে মুক্তি পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবনীনির্ভর বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সারা দেশে মুক্তির মধ্য দিয়ে দেশবাসীর এ চলচ্চিত্রের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি (টিএফপি) বিভাগের চেয়ার হাবিবা রহমান বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির জীবন ও কর্মের চিত্রায়নে তরুণ চলচ্চিত্র তারকাদের অভিনীত ছবিটি নতুন প্রজন্মকে ঐতিহাসিক আখ্যানের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত করবে।’
কপিরাইটার ও মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম, টিভি এবং নিউ মিডিয়া প্রোডাকশনের বাংলাদেশী ছাত্র দুর্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মতো একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বকে একটি ছবিতে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরা খুবই কঠিন কাজ। শ্যাম বেনেগাল পরিচালনা ও বঙ্গবন্ধুর বড় সন্তান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে নির্মিত চলচ্চিত্রটি নিয়ে আমরা খুব আশাবাদী ছিলাম।’
দুর্জয় আরও বলেন, ‘বহু সংখ্যক প্রখ্যাত বাংলাদেশি ও ভারতীয় শিল্পী দীর্ঘদিন ধরে এ চলচ্চিত্রে অবদান রেখেছেন। অন্য কোনো চলচ্চিত্রে এত বেশি সংখ্যক চলচ্চিত্র তারকাকে একটি সিনেমায় দেখা যায়নি।’
ফিল্ম অ্যাক্টিভিস্ট ও চলচ্চিত্র বিষয়ক বাংলাদেশী টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সামি আল মেহেদী বলেন, ‘ফিল্মটি নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা পাহাড়ের চেয়েও বড়। চলচ্চিত্রটি একটি রাজনৈতিক আইকনকে চিত্রিত করেছে যার ব্যক্তিত্ব, দর্শন ও সত্তা আমাদের জাতীয় আশা ও আকাক্সক্ষার সাথে জড়িত। আশা করি, প্রতিভাবান চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল শিল্পীদের কাছ থেকে সেরা কাজটি পেয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলচ্চিত্রের সমস্ত বিষয়বস্তু সব মহলে গ্রহণযোগ্য করার জন্য একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা ও প্রকৃত সময়, ইতিহাস ও সংলাপ চিত্রিত করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএফপির শিক্ষক খন্দকার রুবায়ত মুরসালিন বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের সাথে জড়িত বর্ণনা করে বলেন, এই বার্তাটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে। অবশ্যই মুজিবের বায়োপিক একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে থাকবে ও এটি বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শকে জনগণের কাছে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে অনেকাংশে অবদান রাখবে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ‘মুজিব-মেকিং অব নেশন’- বায়োপিকটি ২৭ অক্টোবর ভারত জুড়ে মুক্তি পাবে। এরই মধ্যে দুটি দেশেই ছবিটি সেন্সর বোর্ড থেকে সেন্সর সার্টিফিকেট পেয়েছে। ২০২২ সালের ১৯ মে ফ্রান্সে ৭৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবকালে ছবিটির প্রাথমিক ট্রেলার মুক্তি পায়।
বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গত ১ অক্টোবর মুজিব বায়োপিকের চূড়ান্ত ট্রেলার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এছাড়া, গত ১৪ সেপ্টেম্বর কানাডায় ৪৮তম টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে চলচ্চিত্রটির প্রথম প্রদর্শনী হয়।
বায়োপিকটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের শিল্পী আরিফিন শুভ এবং বঙ্গবন্ধু পত্নী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। আর শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া।
জনপ্রিয় অভিনেতা তৌকীর আহমেদ, চঞ্চল চৌধুরী, প্রার্থনা দীঘি ও অন্যরা বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
ছবিটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন প্রখ্যাত ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালক শান্তনু মৈত্র এবং বাংলাদেশ থেকে বাংলা সংলাপ লিখেছেন সাধনা আহমেদ, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, শিহাব শাহীন ও আনাম বিশ্বাস।
ছবিটির শুটিং ভারতের মুম্বাইতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় এবং শেষ হয় একই বছরের ডিসেম্বর।
ঢাকা বিজনেস/এমএ/