বাংলায় মেলা সদা শতত পরিবর্তনশীল। মেলা ধর্মীয় ও সামাজিক চেতনা নানা পার্বণকে ঘিরে প্রবর্তিত। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিশু শিক্ষার্থীদের বৃক্ষ পরিচিতি মেলা প্রাথমিক শিক্ষায় এবং বিজ্ঞানে একটা নতুন সংযোজন।
গাছের সান্নিধ্যে একদিন- শিক্ষার্থীরা জানলো পরম উপকারী বন্ধু সম্পর্কে। শিক্ষার্থীরা দলে দলে আসছে, স্টল ঘুরে ঘুরে গাছ দেখছে। আগ্রহ আর বিস্ময়ের দৃষ্টিতে চেষ্টা করছে তাদের কৌতুহলকে নিবৃত করতে। এক একটি গাছকে জানছে, যেন এক একটি রহস্যভেদ করছে। আশেপাশে এতো এতো বন্ধু, অথচ তারা জানতোই না কতোটা পরম উপকারী এই বন্ধুরা। ‘পরম বন্ধু গাছকে জানো’- স্লোগানকে সামনে রেখে মানুষের প্রিয় বন্ধু গাছকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিচিত করানোর লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে অনুষ্ঠিত হলো ‘শিশুদের বৃক্ষ পরিচিতি মেলা’ শীর্ষক ভিন্নরকম এক মেলা। দিনব্যাপী এই ব্যতিক্রমী মেলা আয়োজনের ফলে এলাকায় ইতোমধ্যে বেশ ইতিবাচক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস ও শিক্ষা অফিসের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন সিংগাইর শিক্ষার্থীদের জন্য এই আয়োজন করে।
সিংগাইর উপজেলার ৯৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এইদিন মেলায় এসে বিভিন্ন গাছ চেনার পাশাপাশি এইসব গাছের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। মেলায় বনজ, ফলজ, ঔষধি, ফুল, তেল-মসলা জাতীয় বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২৮২ প্রকারের গাছ ও সবজি শিক্ষার্থীদেরকে পরিচিত করানোর জন্য উপস্থাপন করা হয়। প্রায় ১২০ প্রকার সবজি, শস্য ও গাছের বীজও মেলায় প্রদর্শন করা হয়। শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই উপজেলা প্রাঙ্গণে ভিড় জমায়।
বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক ও গবেষক মোকারম হোসেন এই আয়োজনে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মোকারম হোসেন বলেন, ‘প্রাণ প্রকৃতি নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে কাজ হচ্ছে এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। আজকের এই আয়োজনে যে শিক্ষার্থীরা এসেছে তারা অনেক এগিয়ে থাকলো। আগামী দিনে বৃক্ষ রোপণ এবং বৃক্ষ সংরক্ষণে এই শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।' এর আগে তিনি শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে স্টলে স্টলে ঘুরে বিভিন্ন গাছ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বর্ণনা করেন এবং গাছ সম্পর্কিত নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। এরপর উপজেলা প্রাঙ্গনে থাকা পুরনো গাছগুলোর বিষয়ে তিনি ধারণা দেন। গাছ নিয়ে নতুন নতুন তথ্য জেনে শিক্ষার্থীরাও ভীষণ মজা পায়।
সিংগাইর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পারভীন আকতার বলেন, 'অভিনব এই আয়োজনের ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা খুবই উচ্ছ্বসিত। তাদের মধ্যে গাছকে চেনা ও জানার আগ্রহ এবং গাছ লাগানোর প্রবনতা আরও বেড়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।'
মেলায় আসা বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, 'শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন গাছ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার এই আইডিয়া সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ। এখন আমাদের বাচ্চারা বাড়ির আশেপাশে অবসর সময়ে বাগান করতে উৎসাহী হবে। মোবাইল-কার্টুনের আসক্তি থেকে একটু বাইরে আনা যাবে।'
এই অনুষ্ঠানের আয়োজক দিপন দেবনাথ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিংগাইর বলেন, 'আমাদের পরম উপকারী বন্ধু গাছ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিক জীবনেই ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে এই আয়োজন। গাছের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করা না গেলে পরিবেশকে বাঁচানো যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর 'এক ইঞ্চি জমি যেন ফাঁকা না থাকে' অনুশাসন বাস্তবায়নের জন্যও শিক্ষার্থীদেরকে গাছ ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানাতে হবে।'
মেলায় উপস্থিত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শুক্লা সরকার (শিক্ষা ও আইসিটি) উপজেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে মডেল হিসেবে নিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
মেলায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে গাছের উপর ভিত্তি করে তাৎক্ষণিক একটি কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সর্বোচ্চ উত্তর দেওয়া বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার হিসেবে বই এবং গাছ দেওয়া হয়।
ঢাকা বিজনেস/এন