২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



ক্যাম্পাস
প্রিন্ট

জাবিতে একাডেমিক পরিবেশ রক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাবি সংবাদদাতা || ১০ অক্টোবর, ২০২৩, ১০:১০ এএম
জাবিতে একাডেমিক পরিবেশ রক্ষায় নতুন উদ্যোগ


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একাডেমিক ও প্রশাসনিক পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে রাতভর অনুষ্ঠান পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে আয়োজিত সব অনুষ্ঠান রাত ১০টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৯ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আবু হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এসব তথ্য জানানো হয়। এর আগে, গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অফিস আদেশে জানানো হয়েছে।

অফিস আদেশে বলা হয়, শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের অ্যালামনাই ও সাবেক-বর্তমান বিভিন্ন ব্যাচের রি-ইউনিয়নের অনুষ্ঠানগুলো প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। এতে একাডেমিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে অপরাধমূলক কাজে শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ে। অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার জন্য ৩টি নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠান প্রতি ৩ বছরে একবার আয়োজন করা যাবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ব্যাচগুলোর বর্ষপূর্তি কিংবা রিইউনিয়নের অনুষ্ঠান করা যাবে না এবং রাত ১০টার পর কোনো অনুষ্ঠান করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পাশাপাশি উক্ত সংগঠনকে কালো তালিকাভুক্ত করে ভবিষ্যতে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হবে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতভর অনুষ্ঠান ও উচ্চশব্দে গানবাজনার ব্যাপারে রয়েছে স্পষ্ট ও লিখিত নিষেধাজ্ঞা। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ‘শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০১৮’-এর ৫(ধ) ধারা অনুসারে ‘শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে কোনো প্রকার মাইকিং, ব্যান্ডপার্টি, শোভাযাত্রা, অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চাইলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন’ এবং ৫(য়) ধারা অনুসারে ‘আবাসিক হলে অন্যকোনো ছাত্র-ছাত্রীর পড়ালেখায় বিঘ্ন সৃষ্টি হয়, এমন চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা যাবে না’ বলে উল্লেখ রয়েছে।

তবে, বিগত কয়েক বছরে মুক্তমঞ্চে আয়োজিত অধিকাংশ অনুষ্ঠানগুলোতে কর্তৃপক্ষের দেওয়া নিয়মকানুন ও শর্ত যথাযথভাবে মানা হয়নি। এমনকি নিয়ম লঙ্ঘন করে আবাসিক হলের পাশেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে রাতভর উচ্চশব্দে গানবাজনার ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ও মানসিক স্বাস্থ্যহানির অভিযোগ জানায় শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দের আতশবাজি করা হয় যা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিযায়ী পাখির বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলছে বলেও মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। তাছাড়া মুক্তমঞ্চে রাতভর অনুষ্ঠান চলায় সেখানে নিয়মিত মাদকের আসর বসা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত ও বহিরাগতদের থেকে একাধিকবার ছিনতাইয়ের ঘটনার অভিযোগ রয়েছে।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হাসান বলেন, ‘শীতকালে বিশেষ করে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সাবেক শিক্ষার্থীরা অনেকেই ক্যাম্পাসে নানা প্রোগ্রাম করেন। কিন্তু সেসব প্রোগ্রামের প্রভাব যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, সেটা নিয়ে কেউ চিন্তা করেনা। বড় সংকটের জায়গা হচ্ছে, অনেকের কাছে সন্ধ্যা হয় রাত বারোটায়। মূল প্রোগ্রাম শুরু করে রাত বারোটার পর এবং সেটা সারারাত ধরে চলতে থাকে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘শিক্ষা ও গবেষণার জন্য শিক্ষার্থীরা প্রায় সারাদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে। রাতে তাদের পড়াশোনার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন। সেই আলোকে ও বিভিন্ন প্রেক্ষাপট মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

ঢাকা বিজনেস/উজ্জল/এন



আরো পড়ুন