টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে গত আড়াই মাস ধরে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে পর্যটকদের ভ্রমণসেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন খাতের অন্তত ৫ লাখ ব্যবসায়ী ও কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছেন। তাই দ্রুত এই নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও মালিকদের ১০টি সংগঠনের নেতারা।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার সৈকতের একটি হোটেলে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলো হলো- ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক), কক্সবাজার হোটেল- মোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতি, সিক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব), কক্সবাজার জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতি, কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপ, সেন্টমার্টিন আবাসিক হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতি, সেন্টমার্টিন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতি, সেন্টমার্টিন বাজার দোকান মালিক সমিতি ও ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নাইমুল হক চৌধুরী। সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন স্কোয়াবের সহ-সভাপতি আবু নোমান, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডালিম, সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে সেন্টমার্টিন পর্যটক ভ্রমণের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। ওই পরিসংখ্যানে দাবি করা হয়, ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে মার্চ পযন্ত পাঁচ মাসে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক ভ্রমণ করেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ জন। অর্থাৎ ওই বছর ১৫১ দিনের পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৬৩ জন মানুষ সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন। সেন্ট মার্টিনের জনসংখ্যা ১০ হাজার। এ অবস্থায় দৈনিক এক হাজার পর্যটক ভ্রমণে গেলে কী এমন সমস্যা হতো, সেই প্রশ্ন তোলেন বক্তারা।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নাইমুল হক বলেন, ‘প্রায় এক যুগ ধরে এই নৌপথে ১০টির বেশি জাহাজ চলাচল করছে। নাফ নদীতে নাব্যতা সৃষ্টির অজুহাতে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করা হলেও মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি পণ্যবোঝাই জাহাজ আসা- যাওয়া করছে। নাব্যতাসংকট থাকলে মালবোঝাই জাহাজ চলাচল করতে পারতো না। দীর্ঘদিন ধরে এই নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় ১০টি সংগঠনের আওতাধীন ৫ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে।’ বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবিকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই নৌপথে জাহাজ চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চান তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘নাফ নদীতে নাব্যতা সৃষ্টির কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পযটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এই নৌপথে জাহাজ চালুর বিষয়ে কোনো সরকারি নির্দেশনা পাইনি এখনো।’
উল্লেখ্য, নাফ নদীতে ডুবোচর ও নাব্যতাসংকটের কথা বলে চলতি মৌসুমের শুরু থেকে (১ নভেম্বর) কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। অথচ কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে একাধিক বিলাসবহুল জাহাজে চড়ে হাজারো পর্যটক সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে যাচ্ছেন। এতে সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের পরিবহনের বিষয়টি ঢাকাকেন্দ্রিক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে বন্ধ থাকা জাহাজগুলোর একাধিক মালিক।
ঢাকা বিজনেস/এম