০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার



হাজার বছরের সাক্ষী ঘোলদাড়ী শাহী জামে মসজিদ

মিজানুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা || ০৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০২:০১ পিএম
হাজার বছরের সাক্ষী ঘোলদাড়ী শাহী জামে মসজিদ


হাজার বছরের সাক্ষী ঘোলদাড়ী শাহী জামে মসজিদ। তৎকালীন বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায় ১০০৬ সালে  প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি।

বলা হয়, তৎকালীন বৃহত্তর কুষ্টিয়া অর্থাৎ কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার প্রথম জামে মসজিদ হিসেবে পরিচিত আছে এই মসজিদটির।

 স্থানীয়দের মতে, সম্ভবত বাংলা ৪১৩ সালের দিকে হজরত খাইরুল বাসার ওমজ (রহ.) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলায় ঘোলদাড়ী গ্রামে মসজিদটি নির্মাণ করেন।

 ইতিহাসবিদদের মতে, ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির নদীয়া বিজয়ের অনেক আগে ঘোলদাড়ী মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে।


 জনশ্রুতি আছে, প্রথম শতাব্দীর কোনো এক সময় হজরত খাইরুল বাসার ওমজ (রহ.) নদীপথে আসেন। আসার সময় ঘোলদাড়ী এলাকায় শেষ হয় নদী। সে সময় ঘোলদাড়ী এলাকায় সামান্য কিছু বাড়িঘর ছিল। তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ঘোলদাড়ী গ্রামে আস্তানা গড়েন। এখান থেকেই তিনি ইসলাম প্রচার-প্রসারের কাজ শুরু করেন এবং তিনি এ গ্রামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। বর্তমানে এটিই ঘোলদাড়ী শাহী জামে মসজিদ হিসেবে পরিচিত। 

উনিশ শতকের শুরুর দিকে ঘোলদাড়ী শাহী জামে মসজিদসংলগ্ন লোকালয়ে ভয়াবহ আগুন লাগে এবং সমস্ত গ্রাম পুড়ে যায়। গ্রামের লোকজন অন্যত্র সরে গেলে মসজিদটি গভীর জঙ্গলে ঢাকা পড়ে, হয়ে যায় ধ্বংসপ্রায়। ফলে ধীরে ধীরে মসজিদটি গভীর জঙ্গলে ঢেকে যায়। 

পরবর্তী সময়ে স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে জঙ্গল পরিষ্কার করে মসজিদটি আবারও নামাজ আদায়যোগ্য করে গড়ে তোলা হয়। সেই থেকে এখনো নিয়মিত মসজিদটিতে নামাজ আদায় করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে একাধিকবার সংস্কারের ফলে মসজিদটির অসাধারণ নির্মাণশৈলী কিছুটা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং এর সামনের অংশ কিছুটা বর্ধিত করায় এর প্রাচীন রূপ বুঝতে সামান্য অসুবিধা হয়।

ঘোলদাড়ী শাহী জামে মসজিদটির নির্মাণশৈলী যেকোনো ব্যক্তিকে মুগ্ধ করবে। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটির স্থাপত্যশিল্প দারুণ নান্দনিক। মসজিদের চার কোণের থামের ওপর রয়েছে চারটি ছোট মিনার। রয়েছে দুই পাশে দু’টি দরজা আর দক্ষিণ দিকে একটি জানালা এবং রয়েছে ছয়টি কুঠরি। মসজিদটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে পাতলা ইট, টালি ও চুন-সুড়কি। মসজিদের ভেতরের দেয়ালে আঁকা আছে নানা ধরনের লতাপাতা ও ফুল। অবাক হলেও সত্য যে মসজিদের গাঁথুনির সময় চুন-সুড়কির সঙ্গে মেশানো হয়েছিল মসুর ডাল। মসজিদের শিলা-লিপিটি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে।


চুয়াডাঙ্গা ইতিহাস পরিষদের পরিচালক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী বলেন, চুয়াডাঙ্গা ইতোপূর্বে নদীয়া জেলার অর্ন্তভূক্ত ছিল। এই জেলার অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন ঘোলদাড়ী শাহী জামে মসজিদ। যা ১০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটি শুধু এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নয়, এটি দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রধান অংশ এবং প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন। সে কারণে এই মসজিদটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন। মসজিদের উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার আজও হয়নি। স্থানীয়দের উদ্যোগে সংস্কার হওয়ার কারণে প্রাচীন নির্মাণশৈলী বিলুপ্ত হয়েছে, যা সংরক্ষণ করে মসজিদটিকে আগের রূপে ফেরানো প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, মসজিদের নির্মাণশৈলীর বিশেষ কৌশল বিশেষত্ব দান করে। সেই বিশেষত্ব যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এবং পূর্বের নির্মাণশৈলী অক্ষুন্ন রেখে সংস্কারের জন্য সরকারের দৃষ্টি কামনা করছি।

ঘোলদাড়ী শাহী মসজিদটি হাজার বছরের একটি প্রাচীনতম মসজিদ। যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিলে এটি হয়ে উঠতে পারে একটি অন্যতম পর্যটন এলাকা।

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন