স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, দেশে প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টশন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন,‘আমাদের সরকার স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে গত প্রায় ১৫ বছরে সরকারি বেসরকারি বহু মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। সারাদেশে প্রায় ১২ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে, এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০ প্রকারের ঔষধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। এটি আশপাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ কোথাও নেই।’
সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন,‘বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অতিরিক্ত মুনাফা লাভের প্রবৃত্তি আমাদের চিকিৎসাবো ও ডাক্তারদের উপর আস্থাহীনতা তৈরী করছে, এবং সাধারণ মানুষকে প্রচণ্ড ভোগাচ্ছে। অনেক সময় শোনা যায়, রোগীকে আইসিওতে দেওয়ার প্রয়োজন নেই, দিয়ে রেখেছেন। রোগী এমনিতেই মৃত্যুবরণ করবে, সেটাকে লাইফ সাপোর্টে দিচ্ছে। এরকম অহরহ ঘটনা শুনতে পায়। এব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও ভুমিকা রাখতে পারে। এব্যাপারে সবচেয়ে প্রয়োজন সদিচ্ছার।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর পাশাপাশি ডাক্তার ও হাসপাতালের উপর যাতে মানুষ আস্থা স্থাপন করতে পারে সেজন্য মানুষের আস্থা অর্জন প্রয়োজন। বিদেশমূখী অনেক রোগীকে আমি জিজ্ঞেস করি, ভারতের ব্যাঙ্গালুর, দিল্লি, কলকাতাসহ বিভিন্ন রাজ্যে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পেড়িয়ে কেন যান ? তখন তারা বলেন, বাংলাদেশেতো ডাক্তার ভালো করে কথা বলে না। যিনি চালু ডাক্তার তার অ্যাসিট্যান্টরা রোগী দেখেন, আর তিনি দু’মিনিট কথা বলেন। আর বিদেশে ডাক্তাররা প্রয়োজনে আধঘন্টা কথা বলেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ডাক্তাররা অনেক মেধাবী, আমাদের একজন ডাক্তার যদি ভালো করে রোগী দেখেন, তিনি যেই ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন, সেটি ইউরোপ আমেরিকায়ও দিতে পারেনা। আমি ইউরোপে অনেকদিন ছিলাম, সেখানকার ডাক্তারদের তুলনায় আমাদের দেশের ডাক্তারদের আইকিউ অনেক বেশি। আমাদের ডাক্তারদের অভিজ্ঞতালব্দ যে জ্ঞান, সেটা ইউরোপের ডাক্তারদের নাই। কিন্তু যত ভালো ছাত্রই হোক, মনযোগ দিয়ে পরীক্ষা না দিলে যেমন পরীক্ষা ভালো হয়না, তেমনি মনযোগ দিয়ে রোগী না দেখলে তো রোগীই ভালো হবেনা। প্রতিবছর মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে। আমাদের মেধাবী ডাক্তাররা যদি আরেকটু মনযোগ দিয়ে রোগী দেখতেন, তাহলে বিদেশমূখী রোগীরা আর যেতেননা।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অন্যান্য ডিসিপ্লিনি ও মেডিকেল বিষয়ে পড়ালেখায় বিরাট একটা পার্থক্য আছে। মেডিকেল কলেজে যারা ভর্তি হন তারা শুরুতেই একটা শপথ নেন, মানব সেবার। মানবসেবা করার বিরাট একটা সুযোগ স্বাস্থ্যসেবা পেশার সাথে যুক্তদের ছাড়া অন্যদের করা সম্ভব নয়। এজন্য আমি তোমাদের অনুরোধ জানাব, ভালো ডাক্তার হয়ে ভালো উপার্জন করার মানসিকতা নয়, মানবসেবার মানসিকতা লালন করে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার জন্য।’
ঢাকা বিজনেস/এমএ/