০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বুধবার



এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন বিকালে, যা জানা জরুরি

স্টাফ রিপোর্টার || ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৪:৩৯ এএম
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন বিকালে, যা জানা জরুরি


ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আজ (২ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টায় উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পুরনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তবে, বিমানবন্দরের কাওলা প্রান্তে ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি গাড়িতে উড়ালসড়কে উঠবেন। টোল পরিশোধ করে উড়ালসড়কের বিজয় সরণি প্রান্ত দিয়ে নেমে যাবেন আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে। সেখানেও উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেখানে তিনি বক্তব্য দেবেন। 

জানা গেছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সড়ক পরিবহন ও  সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে যানবাহন এতে চলাচল করতে পারবে। তবে পথচারী, মোটরসাইকেল, রিকশা, অটোরিকশাসহ তিন চাকার যানবাহন উড়াল সড়কে উঠতে পারবে না।

উড়াল সড়কের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার জানিয়েছেন, দ্রুতগতিতে ও নিরাপদে যাতে গাড়ি চলাচল করতে পারে,  সেজন্য দুই ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সূত্র বলছে, বিমানবন্দর এলাকায় দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরণিতে দুটি ও ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজের সামনে নামছে একটি র‌্যাম্প। এর মধ্যে বনানী ও মহাখালীর দুটি র‌্যাম্পের কাজ শেষ হয়নি। এজন্য আপাতত র‌্যাম্প দুটি বন্ধ থাকবে।

উড়ালসড়কটি তৈরি হচ্ছে সরকারের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে। মূল উড়ালসড়ক ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠা-নামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র‌্যাম্প (সংযোগ সড়ক) রয়েছে। র‌্যাম্পসহ উড়ালসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট এই সাড়ে ১১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে স্বাভাবিকভাবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগত। কোনো কোনো সময় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টাও লেগে যায়। তবে উড়ালসড়কে সময় লাগবে ১০ থেকে ১২ মিনিট।

বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট যেতে কাওলা, কুড়িল আর গলফ ক্লাবে ওঠার ব্যবস্থা থাকবে। একদিকে নামা যাবে বনানী ও মহাখালী আর ফার্মগেটে। অন্যদিকে, তেজগাঁও থেকে বিমানবন্দর যেতে বিজয় সরণি ওভারপাসের দুই প্রান্ত আর বনানী থেকে থাকবে ওঠার ব্যবস্থা। নামা যাবে মহাখালী, বনানী, কুড়িল ও বিমানবন্দর এলাকায়।

উড়ালসড়কটি কাওলা থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত যাবে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার যানজট অনেকটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ওঠা-নামা যেভাবে

যারা ফার্মগেট, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কাঁঠালবাগান, গ্রিনরোড অথবা শাহবাগ, সেগুনবাগিচা ও পুরান ঢাকা থেকে এসে উড়ালসড়কে উঠতে চান, তাঁদের যেতে হবে বিজয় সরণি ওভারপাস অথবা তেজগাঁও এলাকায়।

বিজয় সরণি হয়ে র‍্যাংগস ভবন ভেঙে যে ওভারপাসটি তৈরি হয়েছে, সেটিতে উঠে তেজগাঁওয়ে যাওয়ার আগেই উড়ালসড়কের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। তেজগাঁও থেকে বিজয় সরণির দিকে আসতে ওভারপাসে আরেকটি সংযোগ রয়েছে ওঠার জন্য।

রাজধানীর দক্ষিণ, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাংশের মানুষের জন্য উড়ালসড়কে ওঠার এই পথটিই সহজ। তবে যাঁরা বনানী যেতে পারবেন, তাঁরা বনানী রেলস্টেশনের সামনে দিয়ে উড়ালসড়কে উঠতে পারবেন।

উত্তর দিক থেকে এসে নামার জন্য সহজ পথ ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেটগামী যানবাহনের ইন্দিরা রোডে নামাই সুবিধাজনক।

ঢাকা উড়ালসড়কে ওঠানামার আরও পথ রয়েছে।

অভিমুখী যানবাহন ওঠার স্থান

১. হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা।

২. প্রগতি সরণি এবং বিমানবন্দর সড়কের আর্মি গলফ ক্লাব।

দক্ষিণ অভিমুখী যানবাহন নামার স্থান

১. বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ।

২. মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে।

৩. ফার্মগেট প্রান্তে ইন্দিরা রোডের পাশে।

উত্তর অভিমুখী যানবাহন ওঠার স্থান

১. বিজয় সরণি ওভারপাসের উত্তর ও দক্ষিণ লেন।

২. বনানী রেলস্টেশনের সামনে।

উত্তর অভিমুখী যানবাহন নামার স্থান

১. মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে।

২. বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর সামনে বিমানবন্দর সড়ক।

৩. কুড়িল বিশ্বরোড

৪. বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের সামনে।

মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

এদিকে সেতু বিভাগের গণবিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) জানানো হয়, ঢাকা উড়ালসড়কে দুই ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। তাই মোটরসাইকেল বা অটোরিকশা নিয়ে উড়ালসড়কে ওঠা যাবে না।

দাঁড়ানো, ছবি তোলা, পথচারী হাঁটায় নিষেধাজ্ঞা  

গাড়ি নিয়ে গিয়ে উড়ালসড়কে দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উড়ালসড়কে উঠতে ও চলাচল করতে পারবেন না পথচারীরা।

যানবাহনের গতিবেগ

সেতু বিভাগের তথ্যানুসারে, মূল উড়ালসড়কে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। আর ওঠা-নামার স্থানে (র‍্যাম্প) সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।

টোল আদায়

চলাচল করতে যানবাহনকে টোল দিতে হবে। টোল হার যানবাহনের শ্রেণিভেদে ভিন্ন।

শ্রেণি-১: কার, ট্যাক্সি, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাক (৩ টনের কম)-টোল ৮০ টাকা।

শ্রেণি-২: মাঝারি ট্রাক (৬ চাকা পর্যন্ত)-টোল ৩২০ টাকা।

শ্রেণি-৩: ট্রাক (৬ চাকার বেশি)-টোল ৪০০ টাকা।

শ্রেণি-৪: সব ধরনের বাস (১৬ সিট বা তার বেশি)-টোল ১৬০ টাকা।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই বছরের জুন মাসে উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় প্রকল্পটি  ২০১৬ সালে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু উড়ালসড়কের নকশা বদল, ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, অর্থের সংস্থানসহ নানা জটিলতায় নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা পাঁচ বার পিছিয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

প্রকল্পটিতে থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানির ৫১ শতাংশ, চীন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যা কো-অপারেশন গ্রুপের ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশনের ১৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। নির্মাণ পরবর্তী সাড়ে ২১ বছর উড়ালসড়কের টোল আদায় করে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগের টাকা তুলে নেবে।

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন