ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তে প্রতিবাদে ‘দেশটির পেঁয়াজের ভাণ্ডার’নামে পরিচিত মহারাষ্ট্রে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভে দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে এশিয়াপ সবচেয়ে বড় পাইকারি পেঁয়াজের বাজার লাসালগাঁওসহ প্রায় সব পাইকারি বাজার। ভারতের কৃষক ও কৃষিপণ্যের পাইকারি বিক্রেতাদের সংগঠনগুলোর জোট এগ্রিকালচার প্রডিউস মার্কেট কমিটিজ-এর (এআইএমসি) ডাকে এই ধর্মঘটে সাড়া দিয়েছে মহারাষ্ট্রের কৃষক ও কৃষিপণ্য বিক্রেতারা।
মঙ্গলবার(২২ আগস্ট) ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
শনিবার (১৯ আগস্ট) কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির শুল্ক ৪০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ সংক্রান্ত এক সরকারি প্রজ্ঞাপণে বলা হয়, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বর্ধিত শুল্ক কার্যকর থাকবে।
সংকট নিরসনে মঙ্গলবার ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গয়াল সরকারিভাবে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ‘ঐতিহাসিক মূল্যে’ পেঁয়াজ কেনার আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দেন। মন্ত্রী বলেন, ‘চলতি মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) পেঁয়াজ ২ হাজার ৪১০ রুপিতে (৩ হাজার ১৭৮ টাকা) কিনে নেবে সরকার। গত বছর এই দর ছিল ১ হাজার ২০০ রুপি (১ হাজার ৫৮২ টাকা)।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের অধিকাংশ পাইকারি বাজারে কেনা-বেচা বন্ধ দেখা গেছে। পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন, দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত। প্রতি বছর ২ কোটি ৪০ লাখ টন পেঁয়াজের উৎপাদন হয় দেশটিতে। উৎপাদিত এই পেঁয়াজের অর্ধেকই আসে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জেলা থেকে। এ কারণে পশ্চিমাঞ্চলীয় এ রাজ্যটি ‘ভারতের পেঁয়াজের ভাণ্ডার’ নামেও পরিচিত। এবং মহারাষ্ট্র ভারতের পেঁয়াজের ভাণ্ডার নামে পরিচিত। দেশটির মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের অর্ধেকই আসে পশ্চিমাঞ্চলীয় এই রাজ্যটি থেকে।
কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, খুচরা পর্যায়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে এটিও একটি।
তবে রোববার থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘটে অংশ নেওয়া কৃষকরা ভারতীয় বার্তাসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) জানিয়েছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের লাভবান হবেন মূলত বড় কৃষক ও আড়ৎদাররা, অন্যদিকে ভয়াবহ লোকসান গুণতে হবে মাঝারি ও প্রান্তিক কৃষকদের। কারণ, রপ্তানি শুল্ক আরোপের কারণে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় সবই বিক্রি হবে অভ্যন্তরীণ বাজারে। বড় কৃষক ও আড়ৎদাররা হিমাগারে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলেও মাঝারি ও প্রান্তিক কৃষকদের অধিকাংশই সেই সুযোগ পান না।
এক কৃষক বলেন, ‘গত বছরও এই পরিস্থিতি হয়েছিল। সরকার কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ রুপিতে কিনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল; কিন্তু সেই সুবিধা ভোগ করেছিল বড় কৃষকরা। অনেক ছোট কৃষককে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৮ থেকে ২০ রুপিতে বিক্রি করতে হয়েছে।’
ঢাকা বিজনেস/এমএ/