২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার



‘যখন আমি থাকবো না এ গাছগুলোই হবে আমার অস্তিত্ব’

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ০৭ আগস্ট, ২০২৩, ০৫:৩৮ এএম
‘যখন আমি থাকবো না এ গাছগুলোই হবে আমার অস্তিত্ব’


প্রায় ১৭ বছর আগের কথা। সমাজের জন্য কিছু একটা করার ভাবনা মাথায় আসে মো. আলী আকবর খানের। তখন তাঁর বয়স ষাটের কাছাকাছি। বন্ধু হীরালালের পরামর্শে শুরু করেন গাছ লাগানো। নানা কিছু বিবেচনা করে রোপণের জন্য বেছে নেন তালগাছ। ঠিক করেন বীজ লাগাবেন রেললাইনের দুই ধারে।

তিন কিলোমিটার পথে তালগাছের সারি আলী আকবরের সেই তালগাছগুলো এত দিনে বেশ বেড়ে উঠেছে। তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে সেই তালগাছের সারি।

আলী আকবরের বয়স এখন ৮০। গাছ লাগানোর সেই যে নেশা পেয়ে বসেছিল তাঁর, তা এতটুকু কমেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রামধননগর গ্রামের বাসিন্দা মো. আলী আকবর খান।

ওই গ্রামের মৃত সুলতান খানের ছেলে তিনি। গাছপালা অন্তপ্রাণ মানুষ। আকবর আলী তালগাছ লাগিয়েছেন আখাউড়ার আজমপুর গ্রামের বাইপাস রেললাইন এলাকা থেকে তিতাস সেতুসংলগ্ন এলাকার আগ পর্যন্ত। 

তিনি জানান, ২০ বছর আগে বন্ধুর পরামর্শে কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। তবে যতটা সহজ ভেবেছিলেন, তত সহজ ছিল না কাজটি।

তালবীজ সংগ্রহ করতে নিজ এলাকার বাইরে যেতে হয়েছিল তাঁকে। জেলা সদর ও আশুগঞ্জ উপজেলায় ছুটে যান তিনি। ওই সব এলাকার মিষ্টির দোকানগুলোতে ঢুঁ মারতেন। কারণ সেখানে তালের বিভিন্ন পদ বানানো হয়।

আকবর আলী বলেন, ‘বীজ থেকে চারা গজানোর পর পরিশ্রম বেড়ে যায়। প্রতিনিয়ত এসব চারার প্রতি খেয়াল রাখতে হতো। যত্ন নিতে হতো।’

বেড়ে ওঠা তালগাছগুলো যখন বাইরের মানুষ দেখতে আসেন, ছায়ায় বসে পথিক প্রশান্তি পান, তখন মন ভরে যায় আকবর আলীর। এলাকার রেললাইন ছাড়াও আখাউড়া ও তার বাইরে বিভিন্ন সুফির মাজারে তালের চারা রোপণ করেছেন আকবর আলী।

নিষ্ঠার সঙ্গে গাছ লাগিয়ে যত্ন করে বড় করা নিয়ে নিজের অনুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজের সন্তানের মতো মনে করে গাছগুলোর যত্ন করেছি। কখনো টাকা-পয়সার কথা ভাবি নাই। একদিন আমি পৃথিবীতে থাকবো না, তবে আমার লাগানো গাছগুলো থাকবে। সেটাই হবে আমার অস্তিত্ব।’

আকবর আলীর ছোট ছেলে আলীবর্দি খান সোহেল বলেন, ‌‘আমার বাবা এখন বয়সের ভারে নিজের লাগানো গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন না। তিনি যদি দেখেন কেউ গাছগুলোর কোনো রকম ক্ষতি করছেন, তখন খুব কষ্ট পান।’

আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. কুদ্দুস খান জানান, একটা সময় সকাল-বিকাল শুধু তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকতেন আলী আকবর। অনেকেই এ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতেন। কিন্তু তিনি থেমে যাননি।

উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘আলী আকবর খান বেশ কয়েক বছর ধরে পরিবেশ রক্ষায় নিয়মিত গাছ লাগিয়েছেন, যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি শুধু গাছ লাগিয়েই ক্ষান্ত হতেন না, তার পরিচর্যাও করতেন।’

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, ‘বৃক্ষরোপণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তালগাছ লাগানোর বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বজ্রপাত থেকে রক্ষায় তালগাছের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃক্ষপ্রেমী আলী আকবর ৩ কিলোমিটারজুড়ে তালের চারা রোপণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আলী আকবরের এ রকম কাজ সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।’

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন