২১ ডিসেম্বর ২০২৪, শনিবার



ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঝাঁজ বেড়েছে মসলার, সবজিতেও অস্বস্তি

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ০৭ আগস্ট, ২০২৩, ০৩:৩৮ এএম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়  ঝাঁজ বেড়েছে মসলার, সবজিতেও অস্বস্তি


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাজারগুলোতে চালের দাম স্থিতিশীল পর্যায়ে থাকলেও শাক-সবজি ও মসলা জাতীয় দ্রব্যের দাম চড়া। স্থানীয়রা বলছেন, হু-হু করে জিনিসপত্রের  দাম বাড়ার কারণে এখন আর চাহিদামতো কিনতে পারেন না।  নিম্ন ও নিম্নবিত্তের মানুষের কষ্ট বাড়ছে। আর প্রশাসন বলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখতে নজরদারি চলছে। কেউ বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

শহরের আনন্দ বাজারের চাল ব্যবসায়ী মেসার্স সুমা ট্রেডার্সের পরিচালক মো. নাঈম হোসেন বলেন, ‌‘বাজারে চালের কোনো সংকট নেই। গত ৩ মাস ধরে চালের বাজার স্থিতিশীল। অন্যান্য বছরগুলোতে জুলাই-আগস্ট মাসে বাজারে চালের যে দাম থাকে এবছর এই সময়ে চালের দাম আগের চেয়ে কম।’

এই ব্যবসায়ী জানান, বাজারে কাটারী ভোগ চাল ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার ১০০ টাকা, কাটারী নাজির চাল ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার  টাকা, ঘি-ভোগ চাল ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার  ৯০০ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার  ৫০০ টাকা, বিআর-২৯ চাল ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার  ৪৫০ টাকা, মিনিকেট চাল ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার  ৮০০ টাকা,পাইজাম চাল ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার  টাকা, নাজির শাইল চাল ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার  টাকা, বোরো চাল ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার  ৫০০ টাকা ও মোটা চাল ৫০ কেজির বস্তা ১ হাজার  ৮০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

একই বাজারের আরেক চাল ব্যবসায়ী হাজী শামীম ট্রেডার্সের মালিক মো. শামীম হোসেন বলেন, ‘গত ২ মাস ধরে বাজারে চালের দাম বাড়েনি। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের বিআর-২৮ চাল ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার  ৪৫০ থেকে ২ হাজার  ৫০০ টাকা, বিআর-২৯ চাল ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার  ৩৫০ থেকে ২ হাজার  ৪০০ টাকা, বিভিন্ন ধরনের কাটারীভোগ চাল ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার  ৯০০ থেকে ৩ হাজার  ২০০ টাকা, বিভিন্ন ধরনের মিনিকেট চাল ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার  ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার  ৫৫০ টাকা, নাজিরশাল চাল ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার  টাকা, বিভিন্ন ধরনের বোরো চাল ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার  ৬০০ থেকে ৩ হাজার  ৭০০ টাকা ও বিভিন্ন ধরনের মোটা চাল ৫০ কেজির বস্তা ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার  ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’

একই বাজারের মেসার্স শরীফ ট্রেডার্সের কর্ণধার মো. বাহার উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও চালের দাম বাড়েনি। গত প্রায় ৩ মাস ধরে চালের দাম স্থিতিশীল।’

এই ব্যবসায়ী জানান, বাজারে শুকনা দেশি মরিচ কেজি ৩৭০ থেকে ৩৯০ টাকা, ভারতীয় শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ৪২০ থেকে ৪৬০ টাকা, হলুদ প্রতিকেজি প্রকার ভেদে ১৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, ধনিয়া  প্রতি কেজি ১৯০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা, এলাচি প্রতিকেজি প্রকার ভেদে ১ হাজার  ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার  ৮০০ টাকা, জিরা প্রতি কেজি ১ হাজার  ৭০ থেকে ১ হাজার  ১০০ টাকা, চিনি প্রতিকেজি ১২৮ থেকে ১৩৫ টাকা, লবণ প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁয়াজ দেশি প্রতিকেজি ৮০ টাকা, পেঁয়াজ ভারতীয় ৩৮/৪০ টাকা, রসুন দেশি প্রতিকেজি ১৭০/১৯০ টাকা, রসুন ভারতীয় প্রতিকেজি ১৭৫/১৮৫ টাকা, আদা প্রতিকেজি ১৪০/১৭০ টাকা, আটা প্রতিকেজি ৪০/৪৫ টাকা। বিভিন্ন ধরনের সয়াবিন ৫ লিটার ৮৪০/৮৬০ টাকা, মসুর ডাল প্রতিকেজি ৯০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, বুট ডাল প্রতিকেজি ৮০/ ৯০ টাকা, মুগ ডাল প্রতিকেজি ১২০/১৩০ টাকা। 

সবজির বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, টমেটো প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, শিম প্রতিকেজি ১৫০ টাকা, শসা প্রতিকেজি ৩০/৫০ টাকা, ধনিয়া পাতা প্রতিকেজি ১২০ টাকা, লেবু হালি ২০/৩০ টাকা, লাউ প্রতিপিস ৫০/৭০ টাকা, করলা কেজি ৭০ টাকা, জিঙ্গা প্রতিকেজি ৮০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৩০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৪০ টাকা, কাঁচা কলা হালি ৩০/৩৫ টাকা, মুখি প্রতিকেজি ৬০ টাকা, আলু প্রতিকেজি ৪০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতিকেজি ৪০ টাকা, পেঁপে প্রতিকেজি ৪০ টাকা, মুলা প্রতিকেজি ৪০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতিপিস ৪০/৫০ টাকা, বরবটি প্রতিকেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে শহরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের  ঊর্ধ্বগতিতে আমরা দিশেহারা। ব্যবসায়ীরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাত দেখিয়ে তাদের মনগড়া মতো দাম বাড়াচ্ছে। আগে ৫০০ টাকা দিয়ে যে জিনিস কিনতাম, সেই জিনিস কিনতে এখন ১০০০/১২০০ টাকা লাগে।’

পৌর এলাকার পশ্চিম মেড্ডার গৃহিণী শামসুন্নাহার বলেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছেই। একবার বাড়লে আর কমে না। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমরা কী করবো?’

বাগানবাড়ির বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, ‘বাজারে যেতে ভয় করে। প্রতিদিনই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।’

শহরের হালদারপাড়ার বাসিন্দা শামীম হোসেন বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে এখন আর চাহিদামতো জিনিসপত্র কিনতে পারি না। খুবই কষ্ট হচ্ছে আমাদের মধ্যে-নিম্ন আয়ের মানুষের।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সেলিম শেখ বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেন স্থিতিশীল থাকে, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবসময় বাজারে নজরদারি করা হয়।  কেউ যেন পণ্যসামগ্রী মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে।’

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন