হিন্দি ও বাংলা সংগীত জগতের অমর শিল্পী গীতা দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী। আজ ২০ জুলাই তার ৫১ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭২ সালের আজকের এই দিনে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
গীতা দত্ত মূলত ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে হিন্দি ছবিতে নেপথ্য কণ্ঠ এবং বাংলা আধুনিক গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত।
গীতা দত্ত ১৯৩০ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার ইদিলপুরের একটি ধনী জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরিচালক, অভিনেতা গুরু দত্তের সাথে বিয়ের আগে তার নাম ছিল গীতা ঘোষ রায়চৌধুরী। বিয়ের আগে গীতা রায় নামে সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তার বাবা মার সঙ্গে বোম্বের দাদারে একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে শুরু করেন।
গীতা যখন ১২ বছর বয়সী ছিলেন, তখন সুরকার হনুমান প্রসাদ একবার গীতার গান শুনে মুগ্ধ হন। তিনি ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে গীতাকে ভক্ত প্রহলাদ নামের একটি চলচ্চিত্রে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ দেন। এই ছবিতে গীতা কোরাসে মাত্র দুই লাইন গান গেয়েছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেই তার কৃতিত্ব ফুটে উঠেছিল। পরের বছরে গীতা নেপথ্যশিল্পী হিসেবে দো ভাই ছবিতে কাজ পান। এই ছবিতে তার গান হিন্দি ছবির জগতে গায়িকা হিসাবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রথম দিকে গীতা ভজন এবং দুঃখের গান গাওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন।
১৯৫১ সালে শচীন দেববর্মণের সুরে বাজি চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গান তার সঙ্গীতজীবনে নতুন দিক আনে। তার কণ্ঠস্বরের যৌনতা এবং পাশ্চাত্য সুরে সহজে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার জন্য ১৯৫০এর দশকে লাস্যময়ী এবং ডান্স ক্লাবের গানে তাকে প্রথম পছন্দ করে তোলে। শচীন দেববর্মন দো ভাই ছবিতে গীতার কণ্ঠের জাদু প্রথম ফুটিয়ে তুলেছিলেন। তিনি গীতার কণ্ঠের বাঙালি টানকে সুন্দর ভাবে ব্যবহার করেছিলেন দেবদাস এবং পেয়াসা ছবিতে। পেয়াসা ছবিতে আজ সাজন মুঝে অঙ্গ লাগা লে বাঙালি কীর্তন গানকে গীতা সফল ভাবে হিন্দিতে গেয়েছিলেন।
শচীনদেব বর্মনের সুরকার হিসাবে শুরুর দিকের গানগুলিকে গায়িকাদের ভিতরে গীতাই সবথেকে ভালভাবে গেয়েছিলেন। ও পি নাইয়ারের সুরে গীতা সব ধরনের গানেই পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। তিনি আর লতা মঙ্গেশকর ১৯৫০এর দশকে দুই প্রধান নেপথ্যসঙ্গীত গায়িকা ছিলেন।
হিন্দি গান ছাড়াও গীতা দত্ত গুজরাটি ছবিতেও প্রধান নেপথ্য গায়িকা ছিলেন। তিনি গুজরাটি ভাষায় বিখ্যাত সুরকার অবিনাশ ব্যাসের সুরে বেশ কিছু গান গেয়েছিলেন। ১৯৫০ দশকের শেষ এবং ১৯৬০এর দশকের শুরুতে গীতা বেশ কিছু বিখ্যাত বাংলা গান গায়। এই সময়ে বাংলা ছবি এবং সঙ্গীতের জগৎতে স্বর্ণযুগ চলছিল। তার বেশিরভাগ বাংলা গানেরই সুরকার ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তবে তিনি নচিকেতা ঘোষ এবং সুধীন দাশগুপ্তের সুরেও কিছু গান গেয়েছিলেন।
গীতা দত্তের গাওয়া স্মরণীয় গানের মধ্যে রয়েছে, মেরা সুন্দর সপনা বীত গয়া, ও সপনেবালি রাত, তদবির সে বিগড়ি হুয়ি তকদির; আজ সাজন মুঝে অঙ্গ লাগালো; হাওয়া ধীরে আনা; বক্ত নে কিয়া কেয়া হাসিন সিতম; ও পি নাইয়ারের সুরে তার কয়েকটি গান; জরা সামনে আ; বাবুজি ধীরে চলনা; থান্ডি হাওয়া কালি ঘটা; তুমি যে আমার; এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়; নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে; ওগো সুন্দর জানো নাকি; এই মায়াবী তিথি এবং আমি শুনেছি তোমারি গান।
আজ এই মহান শিল্পীর প্রয়াণ দিবসে তাকে বিনম্র শ্রদ্ধা।
ঢাকা বিজনেস/এন/