২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



আজিমনগর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র পুনঃচালুর দাবি স্থানীয়দের

সনতচক্রবর্ত্তী, ফরিদপুর || ০৭ জুন, ২০২৩, ০২:০৬ পিএম
আজিমনগর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র পুনঃচালুর দাবি স্থানীয়দের


ফরিদপুরের ভাঙ্গার আজিমনগরের উথুলি-পাথরাইল গ্রামের ‘আজিমনগর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি দীর্ঘ ৮ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০১৫ সালের দিকে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে  এলাকাবাসী চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না।  তারা দ্রুত উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পুনঃচালুর দাবি জানিয়েছেন।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে যারা চাকরি করতেন, তাদের অনেকেই অবসরে  চলে গেছেন। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদও  শেষ হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল কর্মকর্তা হিসেবে চাকলাদার তাজুল ইসলামকে সপ্তাহে একদিনের জন্য ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাসেবার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনিও ২০১৫ সালে অবসরে যান। এরপর থেকেই চিকিৎসাকেন্দ্রটি বন্ধ আছে। ফলে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে রোগীদের।

ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৭ সালে এক একর জায়গার ওপর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় এই হাসপাতালটি নির্মিত হয়। সরকার চিকিৎসকসহ জনবলও নিয়োগ দেয়। মাঝে জনবল সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। এরপর আবারও চালু করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বন্ধের পর আজ পর্যন্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি আর চালু করা সম্ভব হয়নি। এভাবে অযত্ন-অবহেলায় ৮ বছর ধরে পড়ে রয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে একতলাবিশিষ্ট দুটি ভবন আছে। সামনের দিকে বড় একটি ভবনে দেওয়া হতো রোগীদের চিকিৎসাসেবা। পেছনের দিকে ছোট আরেকটি ভবনে দুজন চিকিৎসকের পরিবারসহ আবাসন সুবিধা ছিল। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুটি ভবনের সামনে গাছপালা-আগাছা জন্মেছে। পরিত্যক্ত ভবনটি যেন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। ভবন দুটির ভেতরে ও বাইরের দেয়াল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেয়ালে শেওলা পড়ে আছে। ভবনের মধ্যে থাকা আসবাবপত্রগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা টুকু তালুকদার, বারেক তালুকদার ও আকু মাতুব্বর বলেন, ‘উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি যখন চালু ছিল, তখন গড়ে প্রতিদিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা পেতেন। এটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। ছোট-বড় যেকোনো সমস্যা হলে স্বাস্থ্যসেবা নিতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরে যেতে হয়। এতে যাতায়াত খরচসহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সময় মতো জরুরি চিকিৎসাসেবা না পেয়ে অনেকে প্রাণও হারান। হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু করা হোক।’

এলাকার গৃহবধূ হাসি বেগম বলেন, ‘হাতের কাছে কোনো স্বাস্থ্য কেন্দ্র না থাকায় এলাকাবাসী অনেক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কেউ অসুস্থ হলে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। হাতের নাগালে কোনো চিকিৎসা কেন্দ্র না থাকায় বছরের পর বছর ভোগান্তির শিকারের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ইউনিয়নবাসী।’

এ বিষয়ে আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাজাহান হাওলাদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় ভবনের আশপাশে ও ভবনের ভেতর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। সেখানে ভয়ে কোনো মানুষ যায় না। এলাকাবাসী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইউনিয়ন থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে ভোগান্তি আর দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এলাকাবাসীর দাবি, পুনরায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু করা হোক। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা প্রাণেশ চন্দ্রপতি বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বন্ধ। এটি চালুর বিষয়ে ২৯ মে উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পুনরায় চালুর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান  বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে, এখন যেহেতু জানতে পারলাম, খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন