পরিবারে নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা পূরণে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’। খুলনার রূপসায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের সহযোগিতায় ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় বসতবাড়ির আঙ্গিনায় প্রায় দুই শতাধিক পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প মুজিববর্ষ উপলক্ষে নির্মিত আশ্রায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে। তাদের জীবন মান ও সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বীজ, সার, গাছের চারা, নেট, ঝাজড়ি বিতরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কালিকাপুর মডেলের এসব বাগান থেকে শাকসবজি আহরণ শুরু করেছেন চাষিরা। উৎপাদিত সবজি দিয়ে তারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে আয়ও করছেন। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
বসতবাড়ির আঙ্গিনায় দেড় শতক জমিতে বেড়া দিয়ে কালিকাপুর মডেলে পুষ্টি বাগানের প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়। এবং এমনভাবে বাগান তৈরি করা হয়েছে, যেন একজন কৃষক সারাবছরই এখান থেকে কিছু না কিছু পান। কখনো সবজি থাকবে, আবার কখনো থাকবে ফল। বীজ, সার, চারাসহ যাবতীয় ব্যয় সরকারের তরফ থেকে বহন করা হচ্ছে। পরিবারের লোকেরা শুধু পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০ পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হবে। এসব পারিবারিক পুষ্টি বাগানে শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে লাল শাক, মুলা, গীমা কলমি, পালংশাক, পুঁইশাক, ডাটা শাক, ধনিয়া, কাঁচা মরিচ। ফলদ ও মসলা উৎপাদনে মালটা, থাই পেয়ারা, কদবেল, ছফেদা, চুইঝাল, বাতাবি লেবুর চারা লাগানো হয়েছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। প্রতিটি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা রোগ ও পোকা থেকে রক্ষা করতে পরামর্শ দিয়ে ও সরেজমিন খোঁজ নিয়ে সার্বিক সহায়তা করছেন।
উপজেলার ৫নং ঘাটভোগ ইউনিয়নের আলাইপুর গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করছি। আশা করছি নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কিছু সবজি বিক্রি করতে পারবো।’
রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সে অনুযায়ী আমরা পারিবারিক সবজি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে বসতবাড়ির আঙিনায় অনাবাদি ও পতিত জমিতে প্রকল্পের সহযোগিতা ও উদ্ভুদ্ধকরণের মাধ্যমে পুষ্টি বাগান স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রূপসায় মুজিববর্ষের গৃহে স্থাপিত পারিবারিক পুষ্টিবাগান পরিদর্শনের সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, বাংলাদেশ যাতে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারে সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কৃষি মন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতি ইঞ্চি জমির সদ্ব্যবহার করতে সবাই একযোগে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশে খাদ্যের কোনো সংকট হবে না বরং এ দেশে উৎপাদিত খাদ্য বাইরে রপ্তানি করতে পারবো।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, বিএডিসি যুগ্মপরিচালক (সার) লিয়াকত হোসেন, বিএডিসি (সেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজ ফারুক, জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মিজান মাহমুদ, মোসাদ্দেক হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সাজ্জাদ হোসেন, জিকেবিএসপি প্রকল্পের অতিরিক্ত উপপ্রকল্প পরিচালক মো. তৌহিদীন ভুঁইয়া, ক্লাইমেট স্মার্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শেখ ফজলুল হক মনি, কৃষি তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তা শারমিনা শামিম, উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ফরিদুজ্জামান, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরদার মোশাররফ হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার এসএম ফেরদৌস, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিমাংশু রায়, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
ঢাকা বিজনেস/এম