২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার



সুনামগঞ্জে ধান কাটা শেষ, কৃষকের চোখে নতুন স্বপ্ন

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ || ০৭ মে, ২০২৩, ১০:৩৫ এএম
সুনামগঞ্জে ধান কাটা শেষ, কৃষকের চোখে নতুন স্বপ্ন


গত কয়েক বছর পর এবারই হাওরাঞ্চলে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ধান পেয়েছেন কৃষক। তাই হাওরজুড়েই অন্যরকম এক উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। দিন-রাতে ধানকাটা, মাড়াই, সেদ্ধ দেওয়া আর শুকানোর কাজেই কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

শনি হাওর পাড়ের জয়নগর গ্রামের পাশে প্রখর রোদের মধ্যে ধান শুকানোর খলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক সাদেক আলী। তিনি জানান, চার ভাইয়ের যৌথ পরিবার। মাসহ পরিবারের সংখ্যা ২০।  সবাই যোগ দিয়েছেন কাজে। পরিবারের মধ্যে বড় ভাইয়ের তিন মেয়ে ও এক ছেলে কলেজে পড়ে। বাকিরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করছে। বছরে পরিবারের খাবারের জন্য প্রায় ১৩০ মণ ধানের প্রয়োজন হয়। জমি আছে ১৬ কিয়ার (৩০ শতাংশে এক কিয়ার)।

সাদেক আলী বলেন, গত বছর ২৮, ২৯ চাষ করেছিলাম ১৬কিয়ার (৩০ শতাংশে এক কিয়ার) জমিতে। শিলাবৃষ্টি আর বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হলেও প্রতি কিয়ারে ৬ মণ করে সর্ব শেষে মোট ৭০ মণ ধান পেয়েছিলাম। ধান বেশি হলেই আমাদের আনন্দ।  কারণ এই ধানের ওপর আমাদের সারা বছরের খাবারসহ পরিবারের সব ব্যয়ভার নির্ভর করে। 

একই গ্রামের কৃষক আকবর আলী (৬০)। তার পরিবার সদস্য ৬। এক মেয়ে কলেজে পড়াশোনা করে। এ বছর তিনি ৬০ কিয়ার জমিতে ব্রি-২৮,২৯ ধান চাষ করেছেন। এবার তার বেশি ক্ষতি হয়েছে। তার ২১ কিয়ার (৩০ শতাংশে এক কিয়ার) জমির ধান তিনি কাটেননি। কারণ জমিতেই ধান সম্পূর্ণ নষ্ট গেয়েছে।  বাকি জমিতে ধান ভালো হয়েছে। আর সেগুলেই কেটেছেন, মাড়াই আর শুকানোর কাজ করছেন।  

টাঙ্গুয়ার হাওরপারের কৃষকরা জানান, গত ২০১৭-১৮ সালে হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর গত বছর ২০২২সালের এপ্রিলেও পাহাড়ি ঢলে বেশ কয়েকটি হাওরে ফসলহানি ঘটে। এরপর জুন মাসের ভয়াবহ বন্যায় গোলায় রাখা ধানও নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এবার কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই ধান গোলায় তুলতে পারছেন হাওরাঞ্চলে লাখ লাখ কৃষক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাওরাঞ্চলের হাওরগুলোতে বাম্পার ফলন হলেও দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির ধান। বেশি লাভের আশায় কৃষকরা হাওরে দেশি জাতের ধানের চাষাবাদ করছেন না। ফলে দিন দিন হাইব্রিড জাতীয় ধানের দখলে যাচ্ছে জেলার ১৫৪টি ছোট বড় হাওর। এ কারণে হাওর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু ও মজাদার ধান(বেগুনবিচি, লাখাই, টেফি, লাট্টাশইল, গছি,বোরো,আছান,রাতা,বাশফুল প্রভৃতি)। এরপরও এই একফসলি ধানের উৎপাদন বেশি হলেই কৃষকের লাভ। 

জেলা কৃষি বিভাগ-সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলার ছোট বড় ১৫৪টি হাওর ও বিলে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। চলতি বছর হাইব্রিড ৬০ হাজার ৮৬০ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল এক লাখ ৬০ হাজার ৫৬৫ হেক্টর ও স্থানীয় এক হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এবার ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন আরও ১০হাজার মেট্রিক টন বেশি হবে। ৩০টাকা কেজি ধরে উৎপাদিত এই ধানের মূল্য ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এদিকে,হাওরে ধান কাটার জন্য শ্রমিকের সঙ্গে ৭৭৬টি হারভেস্টার রয়েছে। এ কারণে দ্রুত ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৯০ভাগ জমির (১ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর)ধান কাটা হয়েছে। হাওরে ধান কাটা শেষ হতে আরও এক সাপ্তাহ লাগবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, হাওরে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে এবার বেশি ধান উৎপাদন হওয়ার কৃষকেরা খুশি। তারা এখন ধান ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।  

ঢাকা বিজনেস/এনই/

 



আরো পড়ুন