২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



মেসিকে হারালে বিপাকে পড়বে পিএসজি!

মো. মুত্তাকিন আলম || ০৬ মে, ২০২৩, ০৮:০৫ পিএম
মেসিকে হারালে বিপাকে পড়বে পিএসজি!


লিওনেল মেসি ও প্যারিস সেন্ট-জার্মেই এফ.সি-এর (পিএসজি) সম্পর্ক যেন খরস্রোতা পদ্মার বুকে পালছেঁড়া নৌকা নিয়ে বয়ে চলার মতো। এই বুঝি ডুবে যাবে নৌকা। অর্থাৎ  মেসি-পিএসজির মধ্যকার এই টানাপড়েনের সমাপ্তি  হয়তো মেসির বিদায়ের মধ্যদিয়েই শেষ হবে।

আর এই শঙ্কা বহু গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে মেসির সৌদি সফর ও তার ওপর পিএসজির নিষেধাজ্ঞা। এতে  মৌসুম শেষে মেসির সঙ্গে পিএসজির  চুক্তি নবায়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। ইতোমধ্যেই ইউরোপ ও আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যমগুলো মেসির পিএসজি ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।


গুঞ্জন সত্যি হলে, মেসির চলে যাওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে কি ফ্রান্সের জায়ান্ট পিএসজি? তাকে ছাড়াই দল সাজানোর চিন্তাভাবনায় সীমাবদ্ধ থাকবে ক্লাবটি। এই প্রশ্ন থেকে যায় কোটি ফুটবল ভক্তের মনে। তবে উত্তর সোজা মেসি চলে গেলে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে পিএসজি।

২০২১ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে মেসির পিএসজিতে আসার ঘোষণার পর পারই বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসে দলটি। নেইমার এমবাপ্পের সঙ্গে মেসি সবার কেন্দ্রবিন্দুতে তখন পিএসজি ও ফরাসি লিগ ‘ওয়ান’।

মেসির আগমনে বিশ্বব্যাপী এই লিগের অনুসারী সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে যায়। যেখানে আগে খবরের শিরোনাম জুড়ে থাকতো লা লিগা,ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, বুন্দেসলিগা, সিরি আ। তবে বর্তমানে সংবাদপত্রের একটা বড় অংশজুড়ে থাকে লিগ ‘ওয়ান’।

মেসি পিএসজিতে আসার ১ মাসের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে দলটি। বর্তমানে দলটির ফেসবুকে ফলোয়ার রয়েছে  ৪৭ মিলিয়ন ও ইনস্টাগ্রামে  রয়েছে ৭০.৩ মিলিয়ন।  আধুনিক ফুটলের জাদুকরের আগমনে দলটির অনুসারী দ্বিগুণ হারে  বেড়েছে। 


এমন অবস্থায় মেসির সঙ্গে যদি পিএসজির চুক্তি নবায়ন না হয়, তবে  টিভিস্বত্বের আয়ে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পরতে হবে ক্লাবটিকে। যা পিএসজি ও প্রথম সারির অন্য ক্লাবগুলোকেও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

লিগ ওয়ানের সম্প্রচারস্বত্ব অধিকারী  প্রতিষ্ঠান কাতারের বেইন স্পোর্টস। যাদের সঙ্গে চুক্তি শেষ হবে আগামী ২০২৪ সালে। লিগ ওয়ান বর্তমানে ফ্রান্সের বাইরে থেকে আয় করে ৮ কোটি ইউরো।

মেসি ক্লাব ছেড়ে গেলে টিভিস্বত্বে  প্রভাব পড়বে। কারণ ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক স্বত্বের মেয়াদ শেষ হওয়া পর নতুনভাবে দর–কষাকষির মাধ্যমে নতুন টিভিস্বত্ব চুক্তি হবে। এতে এর প্রভাব পড়বে। এশিয়া অথবা লাতিন আমেরিকায় দর–কষাকষিতেও  বিষয়টা আর আগের মতো থাকবে না। ব্র্যান্ড ভ্যালু কমে যাওয়ার আশঙ্কা শতভাগ। এতে আগের মতো দামে কেউ এই লিগের টিভিস্বত্ব কিনতে আগ্রহী হবে না।


মেসির আগমনে ক্লাবটির জার্সি বিক্রিতে করেছে নতুন নতুন সব রেকর্ড। ২০২২ সালে জার্সি বিক্রির পরিমাণ খুব সহজেই ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যা অন্যান্য ক্লাব বা ফুটবলারের চেয়ে বেশি।

তাইতো মেসির চলে যাওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়বে পিএসজি। ক্লাবের পাশাপাশি রাজস্বও হারাবে লিগ। এছাড়া মেসিহীন পিএসজির ম্যচে টিকিট বিক্রিতে পড়তে হবে চ্যালেঞ্জের মুখে। যেখানে এখন মুহূর্তেই পিএসজির ম্যাচে টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।  

ব্যবসায়িক স্বর্থ ও বাণিজ্যকে দূরে রেখে মেসির পারফরম্যান্সে নজর দিলে আশানুরূপভাবে দলকে দিতে পারেননি তার সর্বোচ্চটা। বিভিন্ন ম্যাচের আগে নানা অজুহাতে অনুপস্থিত থেকেছেন দল থেকে। তারপরও পিএসজির হয়ে   এই ফুটবল জাদুকর খেলেছেন ৭১ ম্যাচ। করেছেন ৩১ গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন ৩৩ গোলের। হারতে বসা অনেক ম্যাচকেই নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে জিতিয়ে এনেছেন। মেসির গোলে জিতেছে পিএসজি। পুরনো সহযোদ্ধা নেইমার বা এমবাপ্পে  যখন যার সঙ্গ  প্রয়োজন হয়েছে, মেসি সেখানে বারাবরই সেরা প্রমাণিত হয়েছে।


সব দিক বিবেচনা করে করলে করোনা মহামারীর পর আর্থক সংকটে পরেছে বিভিন্ন ক্লাব। ছাড়তে হয়েছে  উচ্চ দামে কেনা খেড়োয়ারদের। ইচ্ছা থাকার পরও পুরনো খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে পারেনি ক্লাবগুলো। তাই পিএসজির উচিত হবে মেসির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা। সব দিক বিবেচনা করে মেসিকে দলে রাখা। যা মেসি ও পিএসজি; উভয়পক্ষের জন্যই  মঙ্গলময়।



আরো পড়ুন