২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



টাঙ্গাইলে জমে উঠেছে ‘জামাই মেলা’

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || ২৬ এপ্রিল, ২০২৩, ০২:০৪ পিএম
টাঙ্গাইলে জমে উঠেছে ‘জামাই মেলা’


টাঙ্গাইলের রসুলপুরে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী ‘জামাই মেলা’। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) শুরু হওয়া এই মেলা চলবে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) পর্যন্ত।  টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসেছে  এই ‘জামাইমেলা’।

প্রায় দেড় শতাধিক বছর ধরেই ১১, ১২ ও ১৩  বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার রসুলপুরে এই মেলা বসে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার সব মেয়ের বর শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন। তারাই মেলার মূল আকর্ষণ। মূলত এই কারণেই মেলাটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।  এছাড়াও মেলার দিন শ্বাশুড়িরা মেয়ের জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা দেন। সেই টাকা দিয়ে জামাই বাজার করে এনে শ্বশুড়বাড়ীর লোকদের খাওয়ান। ৩ দিনে রসলপুরসহ আশেপাশের অন্তত ৩০টি গ্রামের লাখো মানুষের সমাগম ঘটে এই মেলায়। 


সরেজমিনে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, প্রসাধনী, খাবারের দোকানসহ ছোট-বড় দোকান বসেছে। এই মেলায়  দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন দোকানিরা। মিষ্টি জাতীয় পণ্যের দোকানও আছে।  বড়দের পাশাপাশি ছোট ছেলে মেয়েরা এই মেলা উপভোগ করছে। একদিকে ঈদের আনন্দ, অন্যদিকে মেলাকে কেন্দ্র করে স্কুল মাঠে মানুষের ঢল নেমেছে। 

রসুলপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি হারেজ মিয়া বলেন, 'আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখনও দাদার কাছে এই মেলার কথা শুনেছি। বাড়ির মেয়ের জামাইরা মেলাকে কেন্দ্র করে বাড়ি আসায় ও মহাসড়কের পাশে হওয়ায় মেলাটি প্রতি বছর জমে উঠেছে। এটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী বড় মেলা।

ওই এলাকার জামাই সুকুমার সাহা বলেন, 'প্রতিবছরই আমরা শ্বশুরবাড়ি থেকে মেলায় আসার দাওয়াত পাই। এই মেলা আমার কাছে খুব আকর্ষনীয়। মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে ভাব মিনিময় হয়। সব মিলিয়ে আমরা মেলার দিন আনন্দে মেতে উঠি।'

পাশের গ্রামের আকড়ি ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন বলেন, 'এমনি আমি মিস্ত্রির কাজ করি। মেলা আসলে একটু বাড়তি লাভের আশায় কয়েক বছর যাবত আকড়ি বিক্রি করি। বর্তমানে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে আকড়ি বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যবসা ভালই হচ্ছে। অন্যান্য মেলার চেয়ে এই মেলা অনেক নিরাপদ।'

আরেক ব্যবসায়ী ফরিদা বেগম বলেন, 'এটি টাঙ্গাইল জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। দুপুর থেকেই নারী-পুরুষ, শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ মেলায় ভিড় করছে। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন।'


জামাই মেলার ব্যাপারে রসুলপুরের বাসিন্দা লেখক রাশেদ রহমান বলেন, ‘এই মেলার উৎপত্তি কবে সেটা কেউ জানে না। যুগ যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।  তবে এ মেলাটি প্রায় দেড় শতাধিক বছরের পুরনো। এই এলাকার মানুষের কাছে ঈদ বা পূজাপার্বনের মতোই এই মেলা উৎসবের। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিত। মেলাকে সামনে রেখে রসুলপুর ও এর আশেপাশের বিবাহিত মেয়েরা তাদের বরকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর মেয়ের জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেবার জন্য শ্বশুড়-শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি। মেলার দিন জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন শাশুড়িরা। আর সেই টাকার সঙ্গে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলা থেকে চিড়া, মুড়ি, আকড়ি, মিষ্টি, জিলাপিসহ বিভিন্ন জিনিস কেনেন।’  

তিনি আরও বলেন, 'এই মেলা এলাকার ঐতিহ্য। করোনার মধ্যে ২ বছর এই মেলা বন্ধ ছিল।

মেলা প্রসঙ্গে মেলা কমিটির আহবায়ক আবুল হাসেম বলেন, 'মেলায় ২শ এর বেশি দোকান বসেছে। এই মেলায় মিষ্টি জাতীয় খাবার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। মেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করছে। মেলায় খাবার আইটেম, খেলনাসহ বিভিন্ন ফার্নিচারও পাওয়া যায়। এই মেলা টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী মেলা।' 

ঢাকা বিজনেস/নোমান/এন/



আরো পড়ুন