নরসিংদীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বইছে ঈদের আমেজ। ঈদ ঘিরে অফিস-আদালতের ছুটি শেষ হলেও কমতি নেই দর্শনার্থীর। প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রই এখন জমজমাট। বিশেষ করে ঈদের দিন থেকে শুরু করে দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে এসব বিনোদনের জায়গাগুলো।
এদিকে, ঈদকে ঘিরে নতুন নতুন রাইডস সংযোজনের পাশাপাশি বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে পার্কগুলো। জেলায় চমকে দেওয়ার মতোই বেশ কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন কেন্দ্র নরসিংদী সদর উপজেলার পাচদোনায় ‘ড্রিম হলিডে পার্ক, মাধবদী হেরিটেক রির্সোস, রায়পুরা উপজেলার মরজাল ওয়ার্ন্ডার পার্ক, পান্থশালা, নিলক্ষায় মেঘনার পাড় রিভারভিউ, শিবপুর উপজেলায় আন্দন পার্ক, চিনারদী বিল, সোনামুখী টেক, মনোহরদী উপজেলায় বৈশাখী পার্ক বেলী ও বেলাব উপজেলায় প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের প্রাচীন বাংলার অনন্য প্রত্ননির্দেশক দেশের প্রথম উন্মুক্ত প্রত্ন জাদুঘর উয়ারী-বটেশ্বর।
এ ছাড়াও রয়েছে উন্মুক্ত পরিবেশে নরসিংদীর নাগরিয়াকান্দি মেঘনাপাড় শেখ হাসিনা সেতু, বাদুয়ারচর ব্রিজ এবং পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর সেতু। এক কথায়, পুরো নরসিংদীই যেন পর্যটনজগত। আর তাই উৎসবে আনন্দে ভাসছে জেলা।
এই ঈদে বর্ণিল সাজে সেজেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বিনোদন কেন্দ্র ড্রিম হলিডে পার্কটি। শিশু ও বড়দের নানা আকর্ষণীয় রাইডের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে সংযোজিত হয়েছে নতুন রাইড স্কাই ট্রেন। যা সাম্প্রতিক সময়ে দেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের আদলে তৈরি স্থাপনা ছিল দর্শনার্থীদের জন্য নতুন আকর্ষণ।
তা-ছাড়া বুলেট ট্রেন,এয়ার বাইসাইকেল,সোয়ান বোট, ওয়াটার বোট, রোলার কোস্টার, সুইং চেয়ার, স্পিডবোটসহ আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন রাইডস উপভোগের পাশাপাশি সুইমিংপুলেও উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন দর্শনার্থীরা।
এদিকে পার্কে রয়েছে, একাধিক পিকনিক ভেন্যু, শ্যুটিং স্পট, ২৫টি অ্যাডভেঞ্চার রাইডস, ওয়েভ ওয়াটার পার্ক ও এক্সক্লুসিভ কটেজ। যার মধ্যে ড্রামি আইনকন (জায়ান্ট হুইল), ডাইনোসর অ্যাটাক, ক্যাবল কার, অত্যাধুনিক সুইমিংপুল, ডেমু ট্রেন, আইস পাহাড়, সুইং কার, হেলিকপ্টার রেসকিউ ও রিভার ক্রুজ, রকিং হর্স, চিলড্রেন ক্যাসেল, জাম্পিং হর্স, চাইল্ড টয় ট্রেন, ফ্রি কেসল ফর চিলড্রেন, বাম্পার বোট, বাম্পার কার, বুল রাইড ও ওয়াটার বাম্পার কার অন্যতম। সঙ্গে আছে এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে কৃত্রিম নদী, পাহাড়, জীবজন্তু ও বনমানুষের দ্বীপ নিয়ে ড্রিম সাফারি পার্ক ও ওয়েব ওয়াটার পার্ক।
ড্রিম হলিডে পার্কটি ফুল, ফলদ, বনজ ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছের পাশাপাশি চিরসবুজ বাগানে বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিনোদন কেন্দ্রটিতে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে মনোহর প্রাকৃতিক পরিবেশের নিখুঁত সমন্বয় তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি পদ্মা সেতুর রেপ্লিকা, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, সাবমেরিন, ভাস্কর্য রেইনবো গেট, ডাইনোসর, চেইনের তৈরি পালকি, রিকশা, ফিশ কর্নার, ক্যানেল, লন্ডন ব্রিজ, হার্ট শেড, ফাউন্টেন, ভূতের বাড়ি, ফানি মিউজিক গ্রুপ, সিডনি ব্রিজ যেকোনো বিনোদন প্রেমীকে আকৃষ্ট করবে।
পার্কটিতে দেখা গেছে, শিশু রাইডগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকছে পার্কটি। ছুটির দিনে প্রতিদিন বিকেলেই পার্কগুলোতে বেড়াতে আসাদের ভিড় জনসমুদ্রে রূপ নেয়। ঈদকে ঘিরে বাড়তি আনন্দ পেতে পরিবার নিয়ে দূরদুরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে এখানে আসা।’
কাপাসিয়া থেকে আসা ছোট শিশু ইশামনি বলে, ‘আমি আমার মা-বাবার সঙ্গে এখানে এসেছি। এই পার্কে বিভিন্ন রাইডসে উঠেছি। খুব মজা পেয়েছি।’
ড্রিম হলিডে পার্কের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সবুজ জানান, প্রতিটি ঈদেই আমরা চেষ্টা করি নতুনত্ব রাখার জন্য। এবারের ঈদে আমাদের নতুন আকর্ষণ স্কাই ট্রেন। যেটা পাহাড়ের ওপর স্থাপিত একটি স্টেশন থেকে পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি একটি ব্রিজ দিয়ে চলাচল করবে। এ ছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে আমরা পার্কের সব রাইডে নতুনত্বের ছোঁয়া দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
ড্রিম হলিডে পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মানের এই পার্কটিতে যাতে দর্শনার্থীরা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক পরিবেশে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে পারেন সেদিকটি বিবেচনায় রেখে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। করোনাকালীন সময়ে পার্কটিতে লোকসান হলেও ঈদকে ঘিরে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন আনুমানিক ১০ হাজার দর্শনার্থীর উপস্থিতি হয়েছে। আগামী কয়েক দিন দর্শনার্থীর উপস্থিতি সন্তোষজনক থাকবে বলে আশা করছি।’
ঢাকা বিজনেস/এইচ