২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার



অর্থনীতি
প্রিন্ট

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পুঁজিবাজার, আসছে নতুন বিনিয়োগ

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ০৬ এপ্রিল, ২০২৩, ১২:৩৪ পিএম
ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পুঁজিবাজার, আসছে নতুন বিনিয়োগ


ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের পুঁজিবার। রোজার ঈদকে সামনে রেখে নতুন করে বিনিয়োগও আসতে শুরু করেছে। যারা এত দিন দূরে ছিলেন, তাদের অনেকেই বাজারে ফিরে আসতে শুরু করেছেন।  ফলে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর বাজার মূলধন বেড়েছে।  সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে অধিকাংশ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইজে আটকা আছে। সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ হচ্ছে না। আর যেসব কোম্পানি ফ্লোর প্রাইজে নেই, সেসব কোম্পানিতেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশ কিছুদিন বিনিয়োগ করা থেকে বিরত ছিলেন। যে কারণে বেশকিছু দিন বাজার মূলধন নিম্নগামী ছিল। এবার ঈদকে সামনে রেখে ফ্লোর প্রাইজের বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোতে নতুন বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। ঈদের আগে ক্যাপিটাল গেইনের আশায় মূলত তারা বিনিয়োগ করছেন।      

সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে (২ এপ্রিল থেকে ৬ এপ্রিল)  ডিএসইতে গত সপ্তাহের তুলনায় বাজার মূলধন বেড়েছে। তবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-এ একই সময়ে বাজার মূলধন কমেছে। 

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৬২ হাজার ৯১১ কোটি ৯৮ লাখ ৫৬ হাজার ১৫১ টাকা। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার যা ছিল ৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৬ কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার ৪৩১ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৫৪৫ কোটি ৬৭ লাখ ৩৫ হাজার ৭২০ টাকা। অর্থাৎ ০ দশমিক ০৭ শতাংশ বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে।

ডিএসইতে প্রধান সূচক বৃদ্ধি পেলেও বাকি সূচকগুলো নিম্নগামী ছিল। প্রধান সূচক-ডিএসইএক্স বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ হাজার ২১৪ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহের একই সময়ে যা ছিল ৬ হাজার ২০৬ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক বেড়েছে ৮ পয়েন্ট। 

ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক বিদায়ী সপ্তাহে ছিল ১৩৪৭ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহে ছিল ১৩৪৯ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক কমেছে ২ পয়েন্ট। ডিএসই৩০ সূচক গত সপ্তাহে ছিল ২ হাজার ২০৯ পয়েন্ট। আর বিদায়ী সপ্তাহে ছিল ২১৯৮ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক কমেছে ১১ পয়েন্ট। মোট লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৩৯ কোটি ১৭ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩৩ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮৯৩ কোটি ৩৩ লাখ ১৯ হাজার ৮৮৫ টাকা। মোট লেনদেন বেড়েছে ৭৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে মোট ৪০১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে; এরমধ্যে দর বেড়েছে ৭৬টির, কমেছে ৫৮টির, অপরিবর্তীতো ছিল ২৪৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দর। তবে ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়নি। এর আগের সপ্তাহেও একই পরিমান কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে।

এদিকে, সিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস, বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৪৮ হাজার ২৩৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের একই সময়ে যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৯ কোটি ৬৩ লাখ ১৬ হাজার ৪১৯ টাকা। এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ১১২ কোটি ৬৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৪০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে মোট লেনদেন কমেছে ৭৩ কোটি ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭২১ টাকা।

এদিকে সিএসইতে শুধু একটি সূচক ছাড়া বাকি সব সূচক কমেছে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৮ হাজার ২৮৮  পয়েন্ট। আর বিদায়ী সপ্তাহের একই সময়ে যা ছিল ১৮ হাজার ৩০৪ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক বেড়েছে ০ দশমিক ০৮ পয়েন্ট। সিএসই৩০ সূচক গত সপ্তাহে ছিল ১৩ হাজার ৩৪১ পয়েন্ট। আর বিদায়ী সপ্তাহে ছিল ১৩ হাজার ৩৭১ পয়েন্ট। এক্ষেত্রে সূচক বেড়েছে ০ দশমিক ২ পয়েন্ট। গত সপ্তাহে সিএসসিএক্স সূচক ছিল ১০ হাজার ৯৬২ পয়েন্ট। আর বিদায়ী সপ্তাহে ছিল ১০ হাজার ৯৭৩ পয়েন্ট। এক্ষেত্রে সূচক বেড়েছে ০ দশমিক ০৯ পয়েন্ট। সিএসই৫০ সূচক গত সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ৩১৩ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট। আর বিদায়ী সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ৩১৩ দশমিক ২৩ পয়েন্ট। এক্ষেত্রে সূচক কমেছে ০ দশমিক ১৫ পয়েন্ট। এছাড়াও সিএসআই গত সপ্তাহের তুলনায় বিদায়ী সপ্তাহে বেড়েছে ০ দশমিক ১৪ পয়েন্ট ও সিএসইএসএমইএক্স বেড়েছে ৯ দশমিক ৪০ পয়েন্ট।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে নতুন করে বিনিয়োগ আসছে বাজারে। এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। কারণ কমিশন বাজারের উন্নয়নে এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে; যা বাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে কাজে লাগছে।’

ডিএসই’র সাবেক পরিচালক ও বিএলআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘মার্কেটে নতুন করে কিছু বিনিয়োগ আসছে। তবে সেটার পরিমাণ খুবই কম। আগামীতে এই বিনিয়োগ অব্যাহত থাকতে পারে। তবে ঈদের পর কী হবে, সেটা বলা যাবে না। এই ঈদ পরবর্তী বিনিয়োগের এই ধারা অব্যাহত থাকবে কি না, তা রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।’

ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘নতুন নতুন বিনিয়োগ আসায় বাজার মূলধন বেড়েছে। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’

বাংলাদেশে সিকিরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আসলে আমাদের মার্কেট ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীনির্ভর। যে কারণে এই মার্কেটের বাজার মূলধন, সূচক, টার্নওভারসহ বিভিন্ন বিষয়ে বলা মুশকিল। বাজারে নতুন কিছু বিনিয়োগ এসেছে। যার প্রভাব বাজার মূলধনে পড়েছে। তবে আগামীতে বাজার মূলধন আরও বাড়তে পারে। কারণ আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এক হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ আসবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/




আরো পড়ুন