২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বরইয়ের ফলন ভালো, দামও বেশি, বাড়ছে চাষি

জামাল হোসেন বাপ্পা, বাগেরহাট || ১৬ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৫:৩১ পিএম
বরইয়ের ফলন ভালো, দামও বেশি, বাড়ছে চাষি


বাগেরহাটের ৯টি উপজেলার বেশিরভাগ অনাবাদি জমি এখন সারি সারি বরই গাছে ছেয়ে গেছে। গাছগুলোতে থোকায় থোকায় শোভা পাচ্ছে নানা জাতের বরই। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ করা হচ্ছে বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী ও থাই আপেল কুল। যা রীতিমতো সবার নজর কাড়ছে। এই অঞ্চলে প্রথম দিকে দুই একজন শৌখিন ব্যক্তি শখ করে বরই বাগান করে সফল হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে চাষির সংখ্যাও বেড়েছে। এবার প্রায় সহস্রাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় সব চাষির মুখেই হাসি ফুটেছে। 

জেলার মধ্যে মোরেলগঞ্জ, রামপাল, শরণখোলা ও চিতলমারী উপজেলায় এবার সবচেয়ে বেশি বরই চাষ করা হয়েছে। মোরেলগঞ্জ উপজেলার সফল চাষি ও নার্সারি ব্যবসায়ী আবুবকর হাওলাদার বলেন, বছর দশেক আগে আমি বরই চাষ ও চারা তৈরি করে আসছি। তারপর থেকে প্রতিবছরই চাষির সংখ্যা বাড়তে থাকে। গত বছর সাত-আটজন চাষি বরই বাগান করেন। তারা সবাই ব্যাপকহারে লাভবান হন। তাদের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবার অন্তত ২০ জন কুলবাগান করেছেন। সবার বাগানেই বরইয়ের বাম্পার ফলন হতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে রামপাল গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে ও বসতবাড়ির আঙিনায় অনাবাদি জমিতে করা হয়েছে বিশেষ প্রকারের কুল বাগান। সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে গাছ। গাছগুলো আকারে খুবই ছোট। একেকটি গাছ বড়জোর চার থেকে পাঁচ ফুট হবে। বরইয়ের ভারে গাছগুলো নুয়ে পড়েছে। চিকন বাঁশের লাঠি দিয়ে সেগুলো আটকে রাখা হয়েছে। বাগানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চারপাশ দিয়ে পাটকাঠির বেড়া ও ওপরে জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। কেউ বরইয়ের বাগান পরিচর্যা করছেন। কেউ স্প্রে মেশিন দিয়ে ছিটাচ্ছেন ওষুধ। কেউ শ্রমিকদের নিয়ে বরই তুলে বস্তা ভরছেন। সবমিলিয়ে বরই উৎপাদন নিয়ে মহাব্যস্ত চাষিরা।

চিতলমারী উপজেলার বরই চাষি মাসুম মোল্যা বলেন, আমি ৯ মাস আগে দুই বিঘা অনাবাদি জমিতে ১০০ বল সুন্দরী ও ৫০০ থাই আপেল কুলের কলম (চারা) রোপণ করি। এখন প্রতিটি গাছের বরই বড় বড় হয়েছে, খাওয়ার উপযোগী হয়েছে। ফলনও আশানুরূপ পেয়েছি। প্রতিটি গাছে অন্তত ১০ কেজি করে বরই হবে। এরমধ্যে থাই আপেল কুলের মিষ্টি খুব কড়া ও সুস্বাদু। দামও অনেক ভালো পাচ্ছি। থাই আপেল আরো একমাস আগে থেকে বিক্রি শুরু করেছি। প্রথম দিকে প্রতিকেজি থাই আপেল কুল ২০০ টাকাও বিক্রি করেছি। এখন প্রতিকেজি পাইকারি ১০০ টাকা ও খুচরা ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। 

তিনি আরও বলেন, দুই বিঘা জমিতে আমার এখন পর্যন্ত এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বছর শেষে বাগানের সব বরই বিক্রি করে অন্তত তিন থেকে চার লাখ টাকা হবে। এতে খরচ বাদে লাখ দুয়েক টাকার মতো লাভ হবে বলে আশা করছি।


মোরেলগঞ্জ উপজেলার আরেক বরই চাষি আলমগীর ফকির বলেন, প্রতিবেশীর বরই চাষ করা দেখে গত চার বছর ধরে আমিও কিছু জমিতে চাষ শুরু করি। এবার ২৪ কাঠা জমিতে বরই বাগান করেছি। ফলন হয়েছে খুবই ভালো। প্রতিবছর বরই উৎপাদন ও সাংসারিক খরচ বাদে আমার প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় থাকে। 

অপর বরইচাষি নাগর মোল্যা বলেন, ‘আমি ২৬ কাঠা জমিতে বল সুন্দরী ও ভারত সুন্দরী কুলের চাষ করছি। যদি ঝড়-তুফান না হয়, তাহলে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। অন্যান্য ফসলের চেয়ে বরই চাষ করে আমি অনেক বেশি লাভবান হচ্ছি।’

মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী বলেন, ‘মোরেলগঞ্জে কিছু নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, যারা ফল চাষে ঝুঁকছেন। বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ায় বিশেষ করে বরই চাষের দিকে এখন বেশি ঝুঁকছেন তারা। এবছর উপজেলায় গত বছরের চেয়ে ২ হাজার হেক্টর বেশি আবাদি ও অনাবাদি জমিতে বরই চাষ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের আধুনিক জাতের কলম (চারা) এনে বাণিজ্যিকভাবে বরই বাগান করছেন চাষিরা। এতে চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনই সামাজিকভাবেও তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে উপজেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমির এসব উদ্যোক্তাদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।’ 

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন