২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার



চুয়াডাঙ্গায় বিনা লাভের দোকান

মিজানুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা || ২৬ মার্চ, ২০২৩, ০৪:৩৩ এএম
চুয়াডাঙ্গায় বিনা লাভের দোকান


সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে বাজারে চলছে নানা রকম অস্থিরতা। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। অস্থিরতার এই বাজারে পবিত্র রমজান উপলক্ষে ভিন্নরকম এক উদ্যোগ নিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার এস এম ওয়াহিদুজ্জামান নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বিনা লাভে পণ্য বিক্রি করবেন রমজান মাসজুড়ে।

এস এম ওয়াহিদুজ্জামান চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর পৌর এলাকার শান্তিপাড়া স্কুল মোড়ের বাসিন্দা। তিনি পেশায় মুদি ব্যবসায়ী। এতে তাকে সহযোগিতা করছেন এলাকার আরও দুই প্রতিবেশি হাসানুজ্জামান এবং মোহাম্দ রুবেল।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেন এবং পুরো রমজান মাসে চলবে এ কার্যক্রম বলে জানিয়েছেন এস এম ওয়াহিদুজ্জামান।

বিনা লাভের দোকানের উদ্যোক্তা এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‌‘অন্যান্য মুসলিম দেশে যেমন সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত এসব দেশে রমজান মাস আসলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে প্রচুর পরিমাণ ছাড় দিয়ে কম দামে বিক্রি করা হয়। যেন ভোক্তারা ভালোভাবে সব কিছু কিনতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্রটা ভিন্ন। আমাদের দেশে রমজান মাস আসলেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বহুগুণে বেড়ে যায়। এর পেছনে দায়ী অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী। ফলে বিপদে পড়ে যান খেটে খাওয়া অসহায় মানুষ। এই চিন্তা থেকেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আমি যে পাইকারি দামে পণ্য ক্রয় করছি, সে দামেই বিক্রয় করছি সাধারণ মানুষের কাছে।’ 

এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘বাজার থেকে অনেক ভালো মানের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিশেষ করে যেগুলো রোজার মাসে খুব প্রয়োজনীয় আমি সেই জিনিসগুলোই পাইকারি কিনে এনে বিনা লাভে বিক্রি করছি। রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চিনি, তেল, ছোলা, মুড়ি, মিছরি, বেসন, খেজুর, রুহ আফজা, সেলাইন, নুডলস, পোলাও চাল এগুলোর বেশি চাহিদা। আর এগুলোই সাধারণ ক্রেতারা বেশি নিচ্ছেন। আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী পাড়ার মানুষকে সহযোগিতা করতে পারছি, এটাই আমার জন্য অনেক। যাদের সামর্থ্য আছে তারা যদি সবাই তাদের নিজ নিজ এলাকায় এমন উদ্যোগ নেন তাহলে সাধারণ মানুষের অনেক বড় উপকার হবে।’

বিনা লাভের দোকানের সহযোগী হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ওয়াহিদুজ্জামান ভাই খুব ভালো একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আমরা তার সঙ্গে কাজ করতে পেরে ভালো লাগছে। ভালো কাজ করতে পারলে সবসময়ই ভালো লাগে। আমাদের ব্যবসায়ে অভিজ্ঞতা না থাকলেও এই দোকানে যতটা পারছি সহযোগিতা করছি। আমরা প্রথমদিনে শতাধিক ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করতে পেরেছি।’

বিনা লাভের দোকানের আরেক সহযোগী মোহাম্দ রুবেল বলেন, ‘ওয়াহেদুজ্জামান ভাই সবসময়ই এমন মানবিক উদ্যোগ নেন। তার দোকানের পাশে পশুপাখির পানি খাওয়ার জন্য পাত্রে পানি রেখে দিয়েছেন। পথচারীদের জন্যও তিনি গরমে খাবার পানির ব্যবস্থা করে থাকেন। রোজার মাসে তিনি বিনা লাভে পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা তাকে সহযোগিতা করছি বিক্রি করা, পণ্য ওজন করার কাজে। ভালো কাজে থাকতে পারলেও অনেক ভালো লাগে।’

পণ্য কিনতে আসা ক্রেতা আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমরা পাইকারি দোকান থেকেও অনেক কম দামে জিনিস কিনতে পারছি। আমি তেল, চিনি, মুড়ি, ছোলা, মিছরি নিয়েছি, বাজার থেকে অনেক কম দামে কিনতে পেরেছি।’

ক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি এখানে থেকে যে পণ্যগুলো ক্রয় করেছি, দাম অন্য দোকানের তুলনায় হিসাব করলে ২০০-৩০০ টাকার মতো সাশ্রয় হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের জন্য বর্তমানে এই উর্ধ্বগতির বাজারে অনেকটা স্বস্তিদায়ক। আমি নিজে নিয়েছি এবং অনেকজনকে এ সম্পর্কে বলেছি।’

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি মানিক আকবর বলেন, ‘ওয়াহিদুজ্জামান যে কাজটা করছেন, সেটা প্রশংসার দাবিদার। রমজান মাস এলেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে অধিক মুনাফা করে থাকেন। সেখানে ওয়াহিদুজ্জামান বিনা লাভে অর্থাৎ যে দামে তিনি পাইকারি কিনে আনছেন, সেই দামেই তিনি সাধারণ ক্রেতার মাঝে বিক্রি করছেন। এতে তার লাভ তো হচ্ছেই না বরং আরও লস হচ্ছে। কারণ পণ্য আনা নেওয়া খরচটাও নিজে বহন করছেন। আমরা তার এই কাজকে সাধুবাদ জানাই। তাকে দেখে আরও সবাই উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজ নিজ এলাকায় যদি এমন উদ্যোগ নেন, সবাই তাহলে রমজান মাসে খুব স্বস্তিতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।’ 

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন