৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম নিউইয়র্কে এ দিবস উদযাপিত হয়েছিল। অনেক নারীই বলেন, কেন এ নারী দিবস? তাদের ধারণা নারী দিবস মানেই হলো নারীকে ছোট করা। ভাবতে ভালোই লাগে, এই বোধ নারী এখন লালন করছে। তার মানে অনেকটা পথ আমরা এগিয়েছি। হয়তো,কোনো এক অদূর ভবিষতে আলাদা করে দিবস দরকার হবে না। তবে, ভেবে দেখতে হবে, কোনো এক প্রয়োজনের তাগিদেই তৈরি হয়েছিল এ দিবসের। মূল বিষয়টা হলো অবহেলা। এ অবহেলার মধ্যে নারীদের ওপর হিংসা ও নির্যাতন, লিঙ্গসমতা, নারীর অধিকার উল্লেখযোগ্য।
পুরুষ তো নারীকে অবহেলা করছেই। সেইসঙ্গে আদিযুগ থেকে নারীও অন্য নারীকে সঠিক সম্মান দেয়নি। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার পঞ্চাশ পেরিয়ে নারীরা এগিয়েছে বহুদূর। আর এগিয়ে যাওয়ার এই পথকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নারীশিক্ষা। নারীশিক্ষার পথ প্রসার এত সহজ ছিল না।
অবিভক্ত বাংলায় নারীশিক্ষা ও নারী প্রগতির অগ্রদূত ছিলেন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ। ধর্মীয় কুসংস্কারের বাধা কাটিয়ে মুসলিম নারীকে শিক্ষার আঙিনায় আনার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন বেগম রোকেয়া। আর স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে বেড়েছে নারীশিক্ষার হার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭৪ শতাংশ। নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি বর্তমানে বেশ আশার সঞ্চার করছে। নারীশিক্ষার হার ৭১ দশমিক ২ শতাংশ।
বর্তমানে দেশে সার্বিকভাবে শিক্ষায় পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ বেশি। প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫০ দশমিক ৫৪ শতাংশই নারী। এ দুই স্তরে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। গত কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে।পাবলিক পরীক্ষার ফলেও ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। গত কয়েক বছরের হিসাবে দেখা গেছে, জেএসসি-জেডিসি ও এসএসসি পরীক্ষায় কেবল অংশগ্রহণেই নয়, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরিক্ষীয় সফলতায়ও ছাত্রীদের হার বেশি।
বিভিন্ন ধারার আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রফেশনাল, কারিগরিতে নারীর অংশগ্রহণ, টিকে থাকা এবং সফলতার হার বেড়েই চলছে। কেবল স্কুল-কলেজই নয়, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়ছে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ফলে কিংবা সফলতায় এগিয়ে আছে নারী। আর ফলে এগিয়ে থাকার কারণে কর্মক্ষেত্রেও নারীর অবস্থান বাড়ছে। বিশেষ করে, শিক্ষকতা পেশায় প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষকের সংখ্যা দ্রুতই বেড়ে চলেছে।
নারীশিক্ষা হলো নারীর ক্ষমতায়নের মূল ভিত্তি। ক্ষমতায়ন মানে হলো, সবলতা। নারীর নিজের জীবন, সমাজ ও নিজের সম্প্রদায়ের মধ্যে জীবন নির্ধারণমূলক সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা দেয় নারীশিক্ষা। সেই যুগ যুগ ধরে অবহেলিত নারীর মাথা উঁচু করার ক্ষমতা কেবল শিক্ষার মাধ্যমেই ঘটে থাকে। লিঙ্গসমতা ও অধিকার আদায়ে শিক্ষার বিকল্প নেই।
বর্তমান যুগে বাংলাদেশের নারীরা শিক্ষার অধিকার পাচ্ছে। অন্ধকার যুগের অত্যাচার ও একঘরে করে রাখার দিন শেষে হওয়ার পথে। নিজের প্রচেষ্টায় ভাগ্যকেও পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারছে তারা। নারীর আপন ভাগ্য তাদের নিজেদের হাতে। পৃথিবী অনেক দূর এগিয়ে গেছে। চোখ মেলতে হবে ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে।
এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের থিমটি হলো-DigitALL: Innovation and technology for gender equality’। অর্থাৎ বিজ্ঞান, প্রযুক্তিক্ষেত্রে লিঙ্গসমতা। প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল জ্ঞানে আলোকিত নারী এগিয়ে যাবে আরও বেশি। উদ্ভাবনী চিন্তা ও প্রযুক্তির শিক্ষায় নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। লিঙ্গসমতার ক্ষেত্রে নারীকে আগাতে হলে নারীর সহজাতের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। নারীকে অন্য নারীর প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ রাখতে হবে। হিংসা,পরচর্চা,পরনিন্দা, রাগ, মিথ্যার আশ্রয়ে না থেকে নারীকে আত্মোন্নয়নে সময়কে কাজে লাগাতে হবে।
লেখক: ব্যাংক কর্মকর্তা