কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’-এর কাজ ৯৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে অ্যাপ্রোচ রোডের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, শিগগিরই এই টানেল যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তারা বলছেন, টানেল চালু হলে ‘দুটি শহর একটি নগরী’তে পরিণত হবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, এর আগে ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর প্রথম টিউবের সিভিল কাজ শেষ হয়েছিল এবং ওই দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই টিউবের এই টানেলের প্রথম টিউবের পুর্ত কাজ সমাপ্তি উদ্যাপন উদ্বোধন করেছিলেন।
প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. হারুনুর রশিদ চৌধুরি বলেন, ‘টোল প্লাজা সংক্রান্ত ক্রস প্যাসেজ ও টানেলের নির্মাণকাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। দুইটি টিউবের চার লেনের কাজ শেষ ছাড়াও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। টানেলের নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। খুব শিগগিরই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘দেশের প্রথম টানেলটি এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করবে। একবার টানেলটি চালু হলে, এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের জন্য একটি গেম চেঞ্জার হবে, যা দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযোগ সমস্যার সমাধান করবে।’
মাহবুবুল আলম বলেন, ‘মাল্টিলেন টানেলটি সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরকে আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং টানেলটি চট্টাগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে যোগাযোগকে আরও সহজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। টানেলটি কর্ণফুলী নদীর উপর শাহ আমানত সেতুসহ দুটি সেতুতে যানজটও কমিয়ে দেবে। ড্রেনেজ সিস্টেমের নির্মাণ কাজ এবং পাম্প স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে।’
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, ১১ মিটার ব্যবধানে ৩৫ ফুট চওড়া এবং ১৬ ফুট উঁচু দুটি টিউব নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে ভারী যানবাহন সহজে টানেল দিয়ে যেতে পারে। নির্মাণাধীন টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩.৪০ কিলোমিটার এবং ৫.৩৫ কিলোমিটারের একটি অ্যাপ্রোচ রোডের পাশাপাশি একটি ৭৪০ মিটার সেতুর সঙ্গে মূল শহর, বন্দর এবং নদীর পশ্চিম দিককে এর পূর্ব দিকের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। প্রকল্পের অংশ হিসেবে, প্রধান বন্দর নগরী এবং কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশকে নদীর পূর্ব দিকে এবং আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে মোট ৭৪০ মিটার দৈর্ঘের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে টানেল টিউবের খনন কাজের উদ্বোধন করেন। ১৪ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়কে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, এই টানেলের যানবাহন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অংশের অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। সূত্র: বাসস
ঢাকা বিজনেস/এম