২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার



‘রোবট নিকোকে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে ব্যবহার করা যাবে’

দেলোয়ার হোসেন শরীফ, কুবি || ০৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ০৮:১২ পিএম
‘রোবট নিকোকে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে ব্যবহার করা যাবে’


চলাফেরা বা কথা বলার পাশাপাশি মানুষের ছবি দেখে বলে দিতে পারে পরিচয়। মানুষের সহকারী হিসেবে কাজ করতে পারবে। যেকোনো এলাকা থেকে ছবি তুলে ভিডিও করে তথ্য দিতে পারবে। চাইলে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন মানুষ৷ এমনই এক রোবট তৈরি করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী৷ 

‘রোবট নিকো’ নামের এই রোবটটি তৈরি করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সনজিত মন্ডল ও ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউকেশন  টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুয়েল নাথ, অনিক চক্রবর্তী, তৌসিফ বিন পারভেজ ও মাহিন খান। তাদের টিমটির নাম ‘কোয়ান্টা রোবটিক্স’৷ কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রোবটটি তৈরি করতে তাদের প্রায় ১১ মাস সময় ব্যয় হয়েছে৷ 

কোয়ান্টা রোবটিক্স টিম জানায়, তাদের তৈরি রোবটটির ভার্সন ১.০, স্পিড ১.৫ গিগাহার্জ, সিক্সটি ফোর বিট কোয়াড-কোর এআরএম প্রসেসর, ৮ গিগাবাইট র‌্যাম, ১২০ গিগাবাইট রম। ২৯টি শক্তিশালী সার্ভো মোটর ব্যবহার করা হয়েছে রোবটটির বিভিন্ন বডি পার্টস মুভমেন্টের জন্য। চলার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে উচ্চ টর্কের ডিসি মোটর। পরিচালনা করার জন্য রয়েছে সেভেন ইঞ্চি রাসবেরি পাই টাচ ডিসপ্লে।

রোবটিক্স টিমের সদস্যরা আরও জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ফ্যাবল্যাবে ‘রোবট নিকো’ তৈরির ক্ষেত্রে একাধিক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। থ্রি ডি মডেল ডিজাইন করে থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে রোবটের বডির বিভিন্ন অংশ তৈরি করা হয়। হিউম্যান ফেস ডিটেক্টশন অ্যান্ড ফেস রিকগনিশনের মাধ্যমে রোবটকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রদান করা হয়। ফেস ডিটেক্টশনের মাধ্যমে মানুষের মুভমেন্ট বুঝতে পারবে নিকো। এছাড়া ফেস রিকগনিশনের মাধ্যমে মানুষের ছবি দেখে বা মানুষকে দেখেই চিনতে পারবে। রোবট নিকো মুভমেন্ট করার জন্য তার শরীরে ২৯টি ডিগ্রি অব ফ্রিডম রয়েছে। রোবটের ব্রেইন হিসেবে রাস্পবেরি পাই ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য একে ব্যবহার করা যাবে। 

এ বিষয়ে টিমের সদস্য জুয়েল নাথ বলেন, ‘‘রোবটিক্সকে জনপ্রিয় করতে আমরা কুমিল্লার স্কুল পর্যায়ে কাজ করেছি। পরে স্কুলের ছেলে-মেয়েদের কাছে রোবটিক্সকে আরও জনপ্রিয় করতে জেলা প্রশাসক মহোদয় এগিয়ে আসেন এবং রোবট তৈরিতে বাজেট দেন। আমরা জানুয়ারি মাসের দিকে ‘রোবট নিকো’ তৈরির কাজ শুরু করি। এর আগে ‘রোবট সিনা ও ব্লুবেরি’ তৈরিতে যে উপকরণ বা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি সেগুলার চেয়ে আরও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। পড়াশুনা, পরীক্ষার পাশাপাশি রোবট তৈরিতে সময় দিতে হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলার একটি কক্ষ ল্যাবে কাজ করেছি।’  

তিনি আরও বলেন, ‘‘আগে দুইটি রোবট তৈরি করেছিলাম, যেগুলো চলাফেরা, কথা বলা, করোনার নমুনা সংগ্রহ, আগুনে সতর্ক করার মতো কাজ করতো। কিন্তু ‘রোবট নিকো’ তৈরিতে আমরা আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। এটি কথা বলার পাশাপাশি ছবি দেখে বা মানুষ দেখে বলে দিতে পারবে তার পরিচয়। চাইলে এমন রোবটকে মানুষ নিজের সহকারী হিসেবে কাজে লাগাতে পারবে।’

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘‘নিকো অফিসিয়ালি প্রকাশ পেয়েছে। এটি রেসপন্স করতে পারে৷ নিজে নিজের পরিচয় দিতে পারে। ‘কোয়ান্টা রোবটিক্স’ ও ফ্যাবল্যাব সম্মিলিতভাবে এটা করেছে।’ 

অর্থায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথম উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আমাদের সন্তানদের কাছে তুলে ধরা। প্রযুক্তিকে বাচ্চাদের কাছে হাতে-কলমে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। কারণ আগামীর বিশ্ব শাসন করবে গণিত, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি। আমাদের সন্তানেরা যেন প্র্যাকটিক্যালি এসব দেখে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শেখায় উদ্বুদ্ধ হয়, উজ্জীবিত হয়। হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট, নার্সিং, রোগীদের বিভিন্ন সার্পোট দিতে রোবট সহযোগিতা করবে। রোবট ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করবে, গৃহস্থালিতে কাজ করবে৷ সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে রোবটিক্সকে এগিয়ে নেওয়ার। রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিংকে জনপ্রিয় করে তুলতে মূলত এ পরিকল্পনা করা।’

উল্লেখ্য, এর আগে কথা বলা রোবট ‘সিনা’ ও ‘ব্লুবেরি’ তৈরি করেছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিম ‘কোয়ান্টা রোবটিক্স’৷

ঢাকা বিজনেস/এম




আরো পড়ুন